রাঙ্গামাটিতে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। এ বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, নব্বই দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের বিপ্লব—এসব সংগ্রামে ছাত্রসমাজ যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।

জেলা প্রশাসক তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার উপর মনোযোগ দাও, সকল অবৈধ কার্যকলাপ, অপকর্ম এবং মাদক থেকে দূরে থাকো। নিজেকে বদলালে তোমার ভাগ্য বদলে যাবে, সেই সাথে তোমার পরিবার ও সমাজেরও পরিবর্তন হবে। আর পরিবর্তিত সমাজের মাধ্যমে দেশ বদলে যাবে। আমাদের যুব সমাজ পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।”

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শহীদ এম আব্দুল আলী মঞ্চে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিব উল্লাহ এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন।

এই অনুষ্ঠানে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন চৌধুরী, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল জুনায়েদ উদ্দিন শাহ চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপেন তালুকদার দীপু, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল আলিম।

এ সময় জেলা প্রশাসক মহোদয় আরো বলেন, আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগকে এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
তরুণদের মধ্যে ঐক্য, সহযোগিতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ আয়োজিত হচ্ছে।

তারই ধারবাহিকতায় ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গন হতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য র‍্যালির মাধ্যমে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় তারুন্যের উৎসব ২০২৫ শুরু হয়। দীর্ঘ দেড় মাসের বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এ উৎসব উদযাপিত হয়ে আজকের এ সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ উৎসবের পর্দা নামতে যাচ্ছে।

এ উৎসবে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন দপ্তরের ব্যবস্থাপনা ও পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজিত হয়। যেখানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন দুর্গম উপজেলার ক্রীড়াপ্রেমী তরুণগণ উৎসাহ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন।

এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ইভেন্টগুলো ছিলো: সোতোকান কারাতে প্রতিযোগিতা, রিজিয়ন কাপ টি ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট ২০২৫ (বালক ও বালিকা), জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫ (অনুর্ধ ১৭, বালক ও বালিকা), প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, এ্যাথলেটিক্স, অনুর্ধ্ব ১৫ সাঁতার প্রতিযোগিতা, ভলিবল প্রতিযোগিতা এবং সর্বশেষ আজকের এ মিনি ম্যারাথন আয়োজন।

তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী তথা দেশ উপহার দেয়ার জন্য সকল প্রকার প্লাস্টিক ও খাবারজাত ওয়েস্ট ম্যাটারিয়েল সংগ্রহ, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘জিরো ওয়েস্ট ব্রিগেড’ গঠন এবং পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া হয়। পরিবেশ সুরক্ষায় ‘জিরো ওয়েস্ট ব্রিগেড’ গঠন কার্যক্রমের আওতায় জেলাপ্রশাসনের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাঙ্গামাটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়।

এছাড়া ১৬ জানুয়ারি হতে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ উপলক্ষ্যে শহীদ শুক্কর স্টেডিয়ামে ১০ দিন ব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলার আয়োজনসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রর্দশনী আয়োজন করা হয়। উক্ত মেলায় প্রায় ১২০ টি স্টল ছিল, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণকারীরা তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেন। এছাড়াও প্রতিদিন তরুণদের নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তরুণদের মাঝে সচেতনতা ও লিডারশীপ গড়ে তোলার জন্য কুইজ, বির্তক ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তরুণদের উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বিভিন্ন দপ্তর যেমন: প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এদের পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্যোক্তা মেলা, পিঠা উৎসব বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, আলোচনা সভা, ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ সফল, জাঁকজমকপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য এ জেলার বিভিন্ন দপ্তর যেমন: রাঙ্গামাটি রিজিয়ন, পুলিশ বিভাগ, জেলা ক্রীড়া অফিস ও ক্রীড়া সংস্থা, রাঙ্গামাটি পৌরসভা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, যুব ও মহিলা অধিদপ্তরসহ এ জেলার সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও বিভাগ সত্বস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং এ উৎসবকে সাফল্যেমন্ডিত করেন।

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গঠনের যে পথে আমরা আছি তাতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন সম্ভাবনা ও উন্নয়নের পথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে আমি তরুণদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।