রাজধানীজুড়ে শুধু মহাজোটের পোস্টার, খোঁজ নেই ঐক্যফ্রন্টের
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে রাজধানীর আসনগুলোতে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার দেখা গেলেও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের তেমন পোস্টার নেই। ১৫টি আসনের মধ্যে সাতটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারে নেমেছেন।
এর মধ্যে একাধিক প্রার্থী সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী প্রচার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ধানের শীর্ষের প্রার্থী ও সমর্থকরা। তবে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা-৬, ৭ ও ১৮ আসনে প্রার্থীরা প্রচারে নামার কথা রয়েছে।
তারা বলেন, পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া হচ্ছে, আর লাগানো হলেও তা ছিঁড়ে ফেলছে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। বাকি আসনগুলোর কোনো প্রার্থী গ্রেফতার আতঙ্কে, আবার কারও প্রস্তুতি না থাকায় প্রচারে নামছেন না।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজধানীতে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার চলছে। যারা প্রচারে অংশ নিচ্ছেন, তাদের ওপর ক্ষমতাসীনরা হামলা করছে। ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সারা দেশের মতো রাজধানীতেও একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। তার পরও ধানের শীষের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানেই প্রার্থীরা প্রচারে যাচ্ছেন, হাজার হাজার মানুষ ধানের শীষের পক্ষে নামছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বুধবার দুপুরে মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় গণসংযোগ করেন ঢাকা-৮ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
এ সময় তিনি নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করে বলেন, আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি, ভোটারদের মন জয় করতে নেমেছি। হামলা কেন? এসব বন্ধ করুন। বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা শান্ত থাকুন। কেউ হামলা করলে আমি তার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখি। তারা দেখি কতটা বাধা দিতে পারে।
সকাল থেকে কমলাপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা, মাদারটেকসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস।
গণসংযোগকালে দুই দফা হামলার অভিযোগ করেছেন তিনি। বিকালে শাহজাহানপুরের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। আমি বাসাবো চৌরাস্তায় গণসংযোগ করার জন্য গাড়ি থেকে নেমেছি মাত্র। দেখলাম, ওরা নৌকার স্লোগান দিতে দিতে এলো হাতে লাঠি আর হকিস্টিক।
তিনি বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশে এ আক্রমণ ওরা চালায়। আমি গাড়ি থেকে বের না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলত। আমার গায়ে হাত দিল, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। আমার ড্রাইভারকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে, ছুরি দিয়ে রক্তাক্ত করেছে। আমার গাড়ির দরজা ভেঙেছে, গাড়ির কোনো গ্লাস নেই। তারা সাংবাদিকদের মেরেছে, ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছে।
ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী নবীউল্লাহ নবীর নেতাকর্মীরা মিছিল-মিটিং করে প্রচারের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠানে গণসংযোগ করছেন।
তবে প্রচারে নামতে পারেননি ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, আমার বাসায় নেতাকর্মীরা আসতে পারছেন না। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাসার সামনে সব সময় সাদা পোশাকে পুলিশ অবস্থান করছে। এলাকায় পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। নিউমার্কেট এলাকায় পোস্টার লাগাতে গেলে একদল সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের বাধা দেয়, মারধর করে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।
নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মারধর ও বাড়িঘর তল্লাশির অভিযোগ মঙ্গলবার সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বুধবারও গ্রেফতারকৃতদের তালিকাসহ গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধের জন্য ইসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখছি না।
ঢাকা-১১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগম ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে। ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগে নামেননি। তার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা প্রচারে নামলেই বাধা দেয়া হচ্ছে। বুধবার ৩৬নং ওয়ার্ডে সোনালীবাগ এলাকায় মহিলা দলের কর্মীরা ধানের শীষের লিফলেট বিতরণকালে তাদের বাধা দেয়া হয় এবং লিফলেট ছিনিয়ে নেয়া হয়।
এ ছাড়া বাগানবাড়ি, পূর্ব নাখালপাড়া লিচুবাগানেও একই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আমার এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার পর্যন্ত লাগাতে দিচ্ছে না। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাসার ড্রাইভারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।
ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম বলেন, প্রচার দূরের কথা, টিকে থাকার চেষ্টা করছি। এলাকায় পোস্টার লাগাতে গেলে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে এ অবস্থা বেশি দিন চলবে না। জনগণ আর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, বুধবার ইসি থেকে বেরিয়ে গুলশানে ফেরার পথে আইডিবি ভবনের সামনে থেকে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সভাপতি ওসমান গণি শাজাহানকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু বলেন, প্রচার শুরুর আগেই বাসার সামনে পুলিশ অবস্থান শুরু করেছে। বাসায় ঢোকা ও বেরিয়ে যাওয়ার সময় একাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। তার পরও ধানের শীষের প্রচার থেমে নেই। বুধবার দারুস সালাম ও মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন