রাজধানীতে ট্রাফিক আইন না মানতে অজুহাতের পাহাড়!
শরতের তপ্ত দুপুর। রাজধানীর বিজয় সরনি। তেজগাঁও লিংক রোডের ফ্লাইওভারের সামনের সড়ক দিয়ে দ্রুত গতিতে চলছিল একটি মোটরসাইকেল। কিন্তু হেলমেট ছিল না আরোহীর মাথায়। হঠাৎ তাকে আটকে দিলেন রোভার ও এয়ার স্কাউট সদস্যরা।
এখানেই শেষ নয়, তারা দ্রুততার সাথে মোটরসাইকেল এবং তার আরোহীর যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পাশেই কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
এমন চিত্র এখন রাজধানীর অনেক ট্রাফিক সিগন্যালের। রোভার ও এয়ার স্কাউট সদস্যরা ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্ব পয়েন্টে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্কাউট সদস্যরা।
বিজয় সরনিতে বুধবার তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে রোভার ও এয়ার স্কাউটের ২৮ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তারা এভাবেই রাস্তার যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন, এরপর নুতন সিডিউল।
জনসাধরণ কেমন ট্রাফিক আইন মানছে জানতে চাইলে রোভার স্কাউট সদস্য শুভ চন্দ্র দাস বলেন: আমাদের জনসাধারণের অজুহাতের শেষ নেই, আইন মানার কথা বললে তারা…
‘ধরুন; আমরা যদি ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে বলি তারা উল্টো আমাদের বলে ওভার ব্রিজ অনেকটা দূরে, আমাদের তাড়া আছে, তোমরা যদি পার তবে সরকারকে বল কাছাকাছি ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করতে।’
শুভ’র পাল্টা প্রশ্ন: এখন আপনিই বলুন আমরা রাস্তায় ট্রাফিককে সহায়তা করতে এসেছি, জনগণের সেবা দিতে এসেছি, আমরা ওভার ব্রিজ কিভাবে করব?
আবার অনেকে মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করে না। তাদের অনেকে আবার অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে বলে, ডাক্তার নাকি কয়েকদিন হেলমেট ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
জনসাধারণের সঙ্গে স্কাউট সদস্যদের সখ্যতা কতোটুকু? জানতে চাইলে শুভ চন্দ্র দাস বলেন: আমাদের সঙ্গে জনসাধারণের কমিউনিকেশন ভালো থাকাটা জরুরি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, সেটা খুবই খারাপ।
‘কারণ তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, আইন মানার কথা বললেই তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। এমন কিছু জনসাধারণ আছে শিক্ষিত মানুষ তারাও আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, অথচ তারা আমাদের বড় ভাই কিংবা বাবা চাচার সমবয়সী।
অধিকাংশ ড্রাইভারদের ধারণা নেই গাড়ি কোন লেনে চলবে। ডানে না বামে? কিন্তু কথা বলতে গেলে গাড়ির ভেতরে বসে থাকা বাবাবা চাচার বয়সী লোকরা দুর্ব্যবহার করে। এসব যখন হয় নিজেদের কাছেও খারাপ লাগে গরমে রৌদে কষ্ট করছি, লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে তারপরও বাহবা না শুনে গালি শুনতে হয়।’
শুভর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে এয়ার স্কাউট সদস্য রকিবুল আলম বলেন: না ভালো মন্দ দুটোই শুনতে পাই আমরা, মানুষ আমাদের অনেক উৎসাহ দেয়, সাধারণ মানুষ এখন অনেকটা সচেতন হইছে, অনেকে ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ব্যবহার করছে। ঢাকা মহানগরীতে এখন লক্ষ্য করবেন বাইকে চালক ও আরোহী দুজনই হেলমেট ব্যবহার করছে। যা আগে ছিল না।
‘আমাদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় থাকাকালীন সময়ে আমরা তাদের বোঝাতাম, এছাড়াও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে নানান সময়োপযোগী কিছু সিদ্ধান্ত মানুষকে হেলমেটে উৎসাহী করেছে।’
‘সত্যি কথা বলতে গেলে এতো কষ্টের পরও যখন সারিবদ্ধ জ্যামে দেখি সবার বাইকে বাইকার ও আরোহীর হেলমেট রয়েছে তখন খুব গর্ব হয়।’-যোগ করেন রকিবুল।
দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া কেমন জানতে চাইলে একদল স্কাউট সদস্যরা বলেন: ট্রাফিকদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো হচ্ছে, এবং এ সহযোগিতায় আমরা অনেক খুশি।সাধারণ জনগণ কখনোই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাফিকের কষ্টটা করবে না বা বুঝবে না, আপনি তাদের লাখ টাকা দিলেও ট্রাফিকের ডিউটি তারা করতে পারবে না।
তানভীর নামের আরেক রোভার স্কাউট সদস্য বলেন, ট্রাফিক পুলিশের ওপর আমরা অনেক গালাগালি করে থাকি, কিন্তু রাস্তায় যখন আমরাও ট্রাফিকদের সঙ্গে নামলাম আমার সেই ধারণাটা মুছে গেল। আমি মনে করি ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিকরা যে কষ্টটা করে সেটা আমরা বুঝতে পারি অনুভব করতে পারি, আপনাকে লাখ টাকা বেতন দিলেও গরম, রৌদ, ঝড়, বৃষ্টি কিংবা উৎসবে রাস্তায় ট্রাফিক ডিউটি করবেন না।
সাধারণ জণগণকে ট্রাফিক আইন মানতে আরো সহনশীল হবার পরামর্শ জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস্) কৃষ্ণপদ রায় বলেন: রাজধানীতে চার হাজার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই কোটি মানুষের চলাচলের দায়িত্বে কাজ করছে। আমাদের প্রত্যেকের সুনাগরিক সুলভ দায়িত্ব থাকতে হবে, সর্বোচ্চ ঘনবসতি পূর্ণ শহরে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
সর্বোচ্চ পরিশ্রমের একটি কাজ ট্রাফিক পুলিশ করছে জানিয়ে তিনি বলেন: বিশ্বের কোনো দেশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত দেখিয়ে ট্রাফিকরা দায়িত্ব পালন করে না। উন্নত বিশ্বে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ নিজের গাড়ি নিজেই চালায়, আর আমাদের দেশে ৯৫ ভাগ মানুষ নিজের গাড়ি চালক রেখে চালায়। আমরা রাস্তায় কিন্তু মালিক আর চালকের আচরণটা বুঝি, যারা গাড়ি কিনবেন তাদের ড্রাইভিং জানতে হবে। তিনি বলেন: আমরা রাস্তা পারাপারে সচেতন না, মোবাইলে কথা বলে রাস্তা পার হই, ওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না, আমাদের নিজেদের আগে দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে তবেই ঢাকাসহ পুরো দেশে একটি সহনশীল অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে যেতে পারব।-সৌজন্যে: চ্যানেল আই অনলাইন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন