রাজধানীতে প্রায় দেড় হাজার ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানী ঢাকায় প্রায় দেড় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রসহ মোট ২ হাজার ১১৩টি কেন্দ্রে ৪৫ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এরমধ্যে পুলিশের থাকছে প্রায় ২০ হাজার সদস্য এবং অঙ্গীভূত আনসারের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য।ডিএমপি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামা মিয়ার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবেন অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অ্যাপস) কৃষ্ণপদ রায়। এছাড়া ৮টি ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে নিজ নিজ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও অতীত ইতিহাস বিবেচনায় যেখানে বা যে ভোটকেন্দ্রে যে রকম ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রের পাশাপাশি পুরো শহরেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। নির্বাচনি মোবাইল পার্টি, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স, ডিবি, সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও প্রস্তুত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে একটি সমন্বিত ও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেন কেউ নাশকতা করতে না পারে।’
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এসব আসনের বিপরীতে ২ হাজার ১১৩টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৪৫৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এবং ৬৫৫টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বা সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বা সার্জেন্টের নেতৃত্বে চার জন পুলিশ কনস্টবলসহ মোট পাঁচ জন পুলিশ মোতায়েন করা থাকবে। এছাড়া, সাধারণ কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বা সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বা সার্জেন্টের নেতৃত্বে তিন জন পুলিশ কনস্টেবলসহ মোট চার জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তার পাশাপাশি চেইন অব কমান্ড মিলিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ৮টি ক্রাইম বিভাগে ভাগ করা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় একজন করে উপ-কমিশনার (ডিসি) নিজ নিজ এলাকার বিষয়টি সমন্বয় করবেন। কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পুরো রাজধানীতে ১০০টি নির্বাচনি মোবাইল টিম টহল দেবে। এছাড়া, এলাকাভিত্তিক টহল টিমে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বা সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বা সার্জেন্টের নেতৃত্বে চার জন পুলিশ কনস্টবলসহ মোট পাঁচ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর কোথাও বড় কোনও সংঘাত বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে স্ট্রাইকিং ফোর্স পাঠানো হবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এলাকা ভিত্তিক টিমগুলো টহলে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকায় ১ হাজার ৪৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হলো ওয়ারী বিভাগে। ওয়ারী বিভাগের ছয়টি থানা এলাকার মধ্যে ওয়ারীতে ২২টি, শ্যামপুরে ২৫টি, যাত্রাবাড়ীতে ৭১টি, ডেমরায় ৪৪টি, কদমতলীতে ৪৯টি ও গেন্ডারিয়ায় ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া, লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালী থানা এলাকায় ১০টি, সূত্রাপুরে ১৯টি, চকবাজারে ৪টি, বংশালে ৪৫টি, লালবাগে ১৪টি ও কামরাঙ্গীরচরে ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। মতিরঝিল বিভাগের ছয় থানার মধ্যে মতিঝিলে ২৩টি, পল্টনে ১৭টি, শাজাহানপুরে ২৮টি, সবুজবাগে ৪১টি, খিলগাঁওয়ে ৬৩টি ও মুগদা থানায় ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুরে ৫১টি, তেজগাঁওয়ে ৩৪টি, শেরেবাংলানগরে ১২টি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ১৭টি ও আদাবরে ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে রমনা বিভাগে। রমনা বিভাগের রমনা থানায় ৬টি, শাহবাগে ৮টি, ধানমন্ডিতে ১৩টি, নিউমার্কেটে ১টি, হাজারীবাগে ৬৪টি ও কলাবাগানে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। নির্বাচনি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ানের পাশাপাশি পুরো ঢাকায় টহল, গোয়েন্দা নজরদারি ও উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্সও রাখা হবে।’
রাজধানীর নিরাপত্তায় থাকবে র্যাব-বিজিবিও
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি রাজধানীর ২ হাজার ১১৩টি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য র্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
র্যাব সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে র্যাবের দশ হাজার ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এক হাজার র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাবের নিজস্ব দুটি হেলিকপ্টারসহ সেনাবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টারও জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করবে র্যাব।
বিজিবি সূত্র জানায়, সারাদেশে বিজিবির ১ হাজার ১১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৫০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির সদস্যরা নির্বাচনি কেন্দ্রগুলোর আশেপাশের এলাকায় নিয়মিত টহল দেবে। উদ্ভূত কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সমন্বিত আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং কমিটি বা সংশ্লিষ্ট এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে পালন করবে।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সেনা ক্যাম্প
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গত ২৪ ডিসেম্বর সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজধানী ঢাকার গাবতলী, মিরপুর, কাফরুল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল পরিচালনাসহ প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে টহল ও অন্যান্য অভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন