রাজধানীতে বৃষ্টি মানেই জলজট আর ভোগান্তি
সামান্য বৃষ্টিতেও রাজধানী ঢাকায় জমছে পানি। আর বৃষ্টির মাত্রাটা যদি মাঝারি থেকে ভারী হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সব মিলে জলাবদ্ধতা যেন এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। রোববার (২০ মে) রাত ১২ থেকে সোমবার (২১ মে) বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে মোট ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা আবহাওয়া অধিদফতরের বৃষ্টিপাত ইনডেক্সে (সূচক) রয়েছে ভারী বর্ষণের ঘরে। রাজধানীতে ভারী বর্ষণের এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বুধবার (২২ মে) পর্যন্তও।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর সকাল ৬টার পর মাত্র এক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ১৯ মিলিমিটার। এতেই রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘ সময় ছিল জলের নিচে। ব্যাংকপাড়া খ্যাত বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও দিলকুশায় জমে হাঁটুপানি, যা শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
অন্যদিকে আরামবাগ, নটর ডেম কলেজ, শাহজাহানপুর ও কমলাপুর এলাকায় জমে ছিল এক থেকে দেড় ফুট পানি। প্রতিবেদকদের তথ্য অনুয়ায়ী, ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড, শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, গ্রিন রোড, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পোস্ট অফিস মোড় এবং মিরপুর ১, ২, ১০ ও ১১ নম্বর এলাকার কোথাও কোথাও ছিল হাঁটুপানি, কোথাও কোথাও ছিল কোমরপানি। সকাল ১০টার পর রাজধানীতে বৃষ্টি না হলেও বিকাল ৪টায়ও এসব এলাকার বেশিরভাগেই দেখা যায় জলজট। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বিবেচনায় বঙ্গভবন থেকে গুলিস্তান মোড় পর্যন্ত সড়কে জমে থাকা পানি সরাতে ব্যস্ত ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
করপোরেশনের সাকার মেশিনের মাধ্যমে ওই সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচলের চেষ্টা চালানো হয়। মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা কারওয়ান বাজারের একটি বেসরকারি সফটওয়্যার কোম্পানির প্রকৌশলী মো. শাকিল রেজা জোয়ার্দ্দার। তিনি জানান, সকালের বৃষ্টির কারণে অফিসের জন্য বেরুতে একটু দেরি হয়। বৃষ্টি থামলে বাসা থেকে বের হন তিনি। রেজা জোয়ার্দ্দার বলেন, ইদানীং অফিসে যাওয়ার আগে বৃষ্টি হলেই বাসা থেকে সাধারণ পোশাকে বের হই, আর ব্যাগে থাকে অফিস ড্রেস। কারণ বৃষ্টি হলেই মিরপুর ১০, ১১ নম্বর এলাকায় পানি জমবে- এটাই স্বাভাবিক। মেনেও নিছি। কাউকে কিছু বলার নেই।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহকারী হিসাবরক্ষক নিগার সুলতানা পরিবারের সঙ্গে থাকেন আজিমপুর। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় মতিঝিলে। সামান্য বৃষ্টিতেই হয় হাঁটুপানি। এতে আমাদের মতো নারীদের পড়তে হয় বেশি ভোগান্তিতে। অফিসে আসতে সমস্যা, বাসায় ফিরতেও সমস্যা। পানি জমলেই রিকশা ভাড়াও বেড়ে যায় তিন-চার গুণ।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিম বঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপটির প্রভাবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। এসব অঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময় দুয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিরও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ভারী বর্ষণের এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হয়। এ সময় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সময় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় মাইজদিকোর্টে, ৬৩ মিলিমিটার।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।01
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন