রাজধানীর কোটাবিরোধী আন্দোলনের পরিস্থিতি যেমন
মঙ্গলবারও সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে উত্তাল রাজধানী ঢাকা। এ দিনও সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, নতুন বাজার, মধ্যবাড্ডা থেকে শুরু করে নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী-বনানী সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে ছোট ছোট দলে যুক্ত হয়ে তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। রাস্তা অবরোধের কারণে সড়কগুলোতে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
সায়েন্সল্যাবে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজধানীর সায়েন্স-ল্যাবরেটরি মোড়ে চলছে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং মুখোমুখি সংঘর্ষ। ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সাইন্সল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজ এর উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন। বিপরীত পাশে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। থেমে থেমে তাদের মধ্যে চলছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ। ইটের আঘাতে উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এর আশপাশের কোথাও পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি।
নতুনবাজারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ
রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নতুন বাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা অবরোধ শুরু করেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কয়েকশত শিক্ষার্থী নতুন বাজার সিগন্যালের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এসময় নতুনবাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়। রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন।
বাড্ডায় সড়ক অবরোধে ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে বনশ্রী ও আবুল হোটেল হয়ে আসা গণপরিবহন দীর্ঘ জটে পড়ে। ফলে অনেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে হাতির ঝিলকে বেছে নেন। একই এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন যুক্ত হন।
বেড়িবাঁধে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা বাতিলের দাবিতে বেলা ১১টায় রাজধানীর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) ও বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার পর থেকে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকম স্লোগান দিতে থাকেন। রাস্তা অবরোধের ফলে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরকে ঘিরে থাকা সবগুলো সড়কে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্লাস পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন রাজধানীর নীলক্ষেতের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি। একইসঙ্গে তাদেরকে ‘বয়কট এক্সাম, বয়কট ক্লাস’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতেও দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির বিরুদ্ধে একটি বিশেষ শ্রেণি পরিকল্পিতভাবে দাঁড়িয়েছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বর্বরোচিতভাবে হামলা চালিয়েছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। যার প্রতিবাদে আমরা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না কোটা বাতিল করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ বর্জন কর্মসূচি চলবে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
অন্যদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পল্টন চায়না টাওয়ার সামনে দিয়ে আবার নয়াপল্টন এসে মিছিলটি শেষ হয়।
উল্লেখ্য, রোববার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন