রাজধানীর রাস্তায় নেই বাস,পুলিশের সতর্ক অবস্থান

শনিবার সকাল থেকে রাজপথে নগর পরিবহনের বাস চোখে পড়েনি খুব একটা। রিকশা ও অটোরিকশা থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়িও সেভাবে বের হয়নি।

যানবাহনের আশায় বিভিন্ন মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে নিরুপায় মানুষকে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে দেখা গেছে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, একই দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি ঘিরে গোলযোগের শঙ্কায় রাস্তায় বাস নেমেছে কম। কিছু গাড়ি বের হলেও পথে যাত্রী পাচ্ছে না তেমন।সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে দুপুরে নয়া পল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। রাতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকেও নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনের দিকে যেতে দেখা গেছে।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৭টি দলও সমাবেশ করবে ঢাকায়। বিজয়নগর, প্রেসক্লাব, কারওয়ানবাজার, আরামবাগ, পুরানা পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় চলবে এসব কর্মসূচি।যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও নেতাকর্মীদের মুক্তি ও কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে মতিঝিলে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। তবে পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি। সকাল থেকে শাপলা চত্বরের কাছে রাস্তায় দেওয়া ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ।

বিএনপির কর্মসূচির পাল্টায় দুপুরে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আগের রাত থেকেই।
একসঙ্গে দুই দলের জমায়েত গত এক বছরে বহুবার দেখেছে ঢাকাবাসী। তবে দুই দলই শক্তি দেখানোর চেষ্টা করায় শনিবার সকালে উৎকণ্ঠা নিয়েই গন্তব্যে বের হন নগরবাসী।

শনিবার সকালে ঢাকার মুগদা থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তা ঘুরে বিআরটিসির দুটি বাস ছাড়া নগর পরিবহনের কোনো বাস দেখা যায়নি।

মগবাজারে যাওয়ার জন্য মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষায় ছিলেন জুয়েল মাহমুদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আয়াত পরিবহনের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। অন্য সময় দশ মিনিট পরপর বাস আসে, কিন্তু প্রায় ৪০ মিনিট হয়ে গেল বাস পাচ্ছি না।”

সকালে মিরপুর থেকে সায়দাবাদ, আজিমপুর এবং সদরঘাটের দিকে যাচ্ছিল কয়েকটি বাস। একটি বাসের চালকের সহকারী পারভেজ হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচির কারণে রাস্তায় গাড়ি কম।

“বেশিরভাগ গাড়ি গ্যারেজ কইরা রাখছে। দুই দলের প্রোগ্রামের কারণে কোনো ঝামেলা হতে পারে এই ভয়ে। আর রাস্তায় প্যাসেঞ্জারও নাই।”

মিরপুর এক নম্বর গোল চত্বর এলাকায় বাসের সংখ্যা খুব কম দেখা গেছে। সনি সিনেমা হলের সামনে ডেমরা থেকে গাবতলীগামী অছিম পরিবহনের একটি বাসে ঘুরিয়ে দিতে দেখা যায়।

বাসটির চালক শামীম আহমেদ বলেন, “যাত্রী কম, এছাড়া কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাড়ি আটকাচ্ছেন। বাড্ডাতে আমাদের তিনটা গাড়ি আটকে দিছে। এছাড়া অন্য পরিবহনের গাড়িও আছে।

“ওইখানে সারাদিন খাটাইব তেলের টাকাও দেয় না। এমনি গাড়ি চালানোর চেয়ে বসাইয়া রাখাই ভালো। এখন গ্যারেজে চলে যামু।”

টেকনিক্যাল মোড়ে বাসের অপেক্ষা ছিলেন অনেক যাত্রী। একটি বাস আসা মাত্রই যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করেন।

আসাদগেট যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় থাকা শাফায়েত হোসাইন নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “আধা ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় আছি। বাস আসেই না, খুব কম। অনেকক্ষণ ধরে দাড়ায় আছি।”

মিরপুর থেকে আজিমপুর রুটের মিরপুর লিংক পরিবহনের ২৫টির মত পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করলেও শনিবার পাঁচ-ছয়টি বাস চলছে বলে জানান লাইনম্যান জামিল।

তার ভাষ্য, “গ্যাঞ্জাম হওয়ার ভয় আছে, এজন্য মানুষের রাস্তায় আসে নাই। যাত্রী না পাইলে গাড়ি চালায় লাভ কী?”

মিরপুরের কালশী, ইসিবি চত্বর, বানানী, কাকলী ও মহাখালী এলাকায় অনেক মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। অনেক সময় পর পর দুয়েকটি বাস আসার পর তাতে ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বেসরকারি অফিসগামী লোকজন।

সকাল থেকে সড়কে গণপরিবহন কম থাকলেও কিছু ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি অটোরিক্সা চলছে। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করেন এমন অনেকেও বাইক নিয়ে রাস্তায় রয়েছেন। তবে সড়কে বাস কম চলায় তারা অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

মহাখালীর একটি গাড়ি মেরামতের কারখানায় কাজ করেন সুমন মিয়া। অন্যদিন মোটরসাইকেলে করে ইসিবি চত্বর থেকে মহাখালীতে ১৫০ টাকায় যেতে পারলেও শনিবার ২৫০ টাকার কমে কেউ যেতে চাইছেন না বলে জানালেন।