রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি নিবিড় দৃষ্টি রাখছে চীন
ঢাকায় চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জো বলেছেন, নির্বাচনের বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি নিবিড় দৃষ্টি রয়েছে চীনের। চীন বাংলাদেশে মসৃণ নির্বাচন দেখতে চায়।
চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত বুধবার বারিধারায় তাদের দূতাবাসে আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ঝ্যাং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিতে ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। তিনি ৭ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন।
প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাম্প্রতিক অধিবেশন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সম্পর্কে অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নজর রাখছি। এদেশে মসৃণ নির্বাচন আশা করি। চীন ও বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক আগামী দিনেও জোরদার থাকবে। চীনের স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্নের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আশা করি, আগামী দিনে আমাদের দুই দেশ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণ করবে।’
রোহিঙ্গা সংকটে চীনের অবস্থান কী জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে সংকট নিরসনের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে চীনের নিজস্ব কোনো স্বার্থ নেই। বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে আমাদের নজর রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিজেরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সংলাপ করছে। প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। চীন এ সংকট নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছেন। এটি একটি জটিল সমস্যা। এখানে ঐতিহাসিক, জাতিগত ও ধর্মীয় উপাদান রয়েছে।’ তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন কী ভূমিকা পালন করবে এমন প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রদূত তার সরাসরি কোনো জবাব দেননি।
চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জো বলেন, আগামী পাঁচ বছরে চীন ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা বিদেশ থেকে আমদানি করবে। এ সময়ে চীনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হবে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। চীন থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করা হবে ৭০০ বিলিয়ন ডলার। এসবই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, আগামী দিনে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। এসব সফর হবে দুই দেশের সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক দল এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মধ্যে। এতে করে আমাদের দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকগুলোর ফিরিস্তি দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ১২তম ক‚টনৈতিক সংলাপ, দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা বিষয়ে দ্বিতীয় সংলাপ, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠক এবং প্রথম রাউন্ডের কনসুলার সংলাপ চলতি বছরেই অনুষ্ঠিত হবে।
চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে চীনের এক হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন বড় বড় প্রকল্পের ফিরিস্তি দেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি লেন সড়ক টানেল নির্মাণ, দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, তেলের ট্যাংকার ক্রয়, চাইনিজ অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল, ডবল পাইপলাইনসহ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং স্থাপন, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৮ম চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু এবং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন