‘রাজনৈতিক হত্যা আড়াল করতে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2018/06/telegraph-report-pic.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
বাংলাদেশ সরকারের মাদকবিরোধী যুদ্ধ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোকে আড়াল করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ। টেলিগ্রাফের তিন সাংবাদিক বেন ফার্মার, সুজানা স্যাভেজ এবং নিকোলা স্মিথ প্রতিবেদনটি লিখেছেন।
চট্টগ্রামে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মী হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা দিয়ে প্রতিবেদনটি শুরু করেছে পত্রিকাটি।
গত মাসে হাবিবুর রহমান যখন বাংলাদেশের ‘আধাসামরিক এলিট টাস্কফোর্সের (র্যা বকে বুঝিয়েছে)’ গুলিতে নিহত হন, তখন বাহিনীটির কর্মকর্তারা হাবিবুরের মৃত্যুর ব্যাপারে একটি চমৎকার কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন। তারা বলেন, মাদক কারবারী হাবিবুর রহমান এবং তার সহযোগীরা তাদের গোপন আস্তানায় কোণঠাসা হয়ে পড়লে প্রথমে তারা পুলিশের উপর গুলি চালায়। পরে বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়লে বন্দুকযুদ্ধে সে প্রাণ হারায়।
মাদক কারবারের বিরুদ্ধে সরকারের সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার পর এরকম বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বাংলাদেশে এখন প্রতিদিনকার ঘটনা। ফিলিপাইনে চলমান দুতার্তের (প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে) মাদকবিরোধী যুদ্ধের সঙ্গে সমভাবে তুলনা করা হচ্ছে এই অভিযানকে।
দুই সপ্তাহের অভিযানে ১২০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে এবং কয়েক হাজারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটাকে দেশটি ইয়াবা ব্যবসার মূলোৎপাটনের জন্য যুদ্ধ হিসেবে দাবি করছে। এসব মৃত্যুতে অভিযোগ জোরদার হচ্ছে যে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জনসমর্থন আদায়ের জন্যই এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
প্রধান বিরোধী দলের (বিএনপি) কর্মী হাবিবুর রহমানের পরিবার দ্য টেলিগ্রাফের কাছে দাবি করেছেন, স্থানীয় মসজিদ থেকে আসার সময় সরকারি বাহিনীর সাদা পোশাকের সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়।
বদলা নেয়া হতে পারে এমন ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাবিবুরের একজন নিকটাত্মীয় বলেন, ‘মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরই তাকে তুলে নেয়া হয়। পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায়ই তাকে হত্যা করা হয়।’
‘সে কোনো মাদক বিক্রেতা ছিল না, মাদকাসক্তও ছিল না। এটা এই কারণেই করা হয়েছে যে, সে সরকার বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল এবং জমি সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিবাদ করেছিল’ যোগ করেন তিনি।
রক্তপাতের মাত্রা দেখে আমেরিকান দূতাবাস হত্যা বন্ধে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে আমি অবশ্যই উদ্বেগ প্রকাশ করছি। গণতন্ত্রে সকলের অধিকার রয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ার সুবিধা পাওয়ার। যদি সহিংস সংঘর্ষ চলতে থাকে তাহলে জনগণের কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। তবে লক্ষ্য হওয়া উচিত জিরো টলারেন্স। সকলকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।’
বাংলাদেশ ৭০ লাখ লোককে মাদকাসক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যার চার-পঞ্চমাংশই ইয়াবায় আসক্ত। আর এই ইয়াবা উৎপাদন হয় মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাতে থাকা কারখানাগুলোতে।
মে মাসের শুরুর দিকে এ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা চলতে থাকবে, যতদিন না বাংলাদেশ সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত হবে। কোন মাদক সম্রাটই পার পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো নির্দোষ লোক হয়রানির শিকার হবে না। যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনা হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা নয়। আমাদের বাহিনীর সদস্যরা আত্মরক্ষার্থেই অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।’
তবে বিভিন্ন সূত্র টেলিগ্রাফকে জানিয়েছে, মাদকের লাভজনক কারাবারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রাজনীতি এবং পুলিশের দুর্নীতি। এই অভিযান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধন ও যারা সরকারের অনেক কিছু জানে তাদের চুপ করিয়ে দিতে বাহিনীগুলোকে সুযোগ করে দিবে।
মৃত্যু ছাড়াও এই অভিযানে নয় হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সাত হাজারেরও বেশিজনকে মোবাইল কোর্টের সংক্ষিপ্ত বিচারে সাজা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া চলমান অভিযান সম্পর্কে বলেন, ‘এই অভিযান অবৈধ। পুলিশ একই সঙ্গে বিচারক এবং জল্লাদের ভূমিকা পালন করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই অভিযান মাদক বন্ধে খুব অল্পই ভূমিকা রাখবে। কারণ এই ব্যবসা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। বরং সম্ভবত আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্যই এই অভিযানের ছক আঁকা হয়েছে।’
সুপ্রিম কোটের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কিংবা অন্যান্য অজুহাতে ততবেশি লোককে হত্যা করা হবে।’
এবছর মেথামফেটামিনের অনেকগুলো বড় চালান এশিয়াজুড়ে ছড়িয়েছে যার অধিকাংশই গেছে বার্মা থেকে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া স্ফটিক মেথামফেটামিনের এ যাবতকালের সবচে বড় চালান আটক করেছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছে এর পরিমাণ ছিল ১.২ টন যা বার্মা থেকে সোনালী হলুদ চায়ের প্যাকেটে করে মালয়েশিয়া থেকে গেছে।
ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডও এই বছরের শুরুর দিকে এর রেকর্ড পরিমাণ চালান আটক করেছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা এবং ফিলিপাইনে চলমান মাদকবিরোধী যুদ্ধে কয়েক হাজার সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত ও মাদক কারবারিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা স্বত্ত্বেও মাদকের বাজার ভয়ঙ্করভাবে বিস্তার লাভ করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বার্মা মেথামফেটামিন উৎপাদনের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যেগুলো উৎপন্ন হয় মূলত দেশটির সীমন্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন