রাজশাহীতে আটকে গেল রংপুরের জয়রথ
ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বিতর্কসহ নানা জটিলতায় টালমাটাল রাজশাহী এক দিকে। অন্য দিকে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা রংপুর। ক্রিকেটীয় শক্তি-সামর্থ্যেও দুই দলের পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু মাঠের খেলায় বদলে গেল সব বাস্তবতা। দাপুটে পারফরম্যান্সে রংপুরের জয়যাত্রা থামিয়ে দিল রাজশাহী।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের শেষ দিনে রংপুর রাইডার্সকে ২৪ রানে হারাল দুর্বার রাজশাহী।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ১৭১ রানের লক্ষ্যে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর।
চলতি আসরে টানা আট ম্যাচে ও সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচ জয়ের পর অবেশষে পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেল রংপুর। ৯ ম্যাচে ৮ জয় নিয়ে তারাই অবশ্য পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। দশ ম্যাচে চার জয়ে চারে উঠে এলো রাজশাহী।
রাজশাহীর এই জয়ে ম্যাচের সেরা রায়ান বার্ল। তবে চেনা ভূমিকায় নয়! ব্যাটিংয়ে তিনি প্রথম বলেই আউট হয়েছেন বাজে এক শটে। কিন্তু পুষিয়ে দিয়েছেন বল হাতে। বিপিএলে আগে কখনও ম্যাচে দুটির বেশি উইকেট ছিল না যার, তিনি এবার শিকার করেন চার উইকেট! এর মধ্যে ছিল নিজের বলে দুর্দান্ত একটি ক্যাচও।
জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটারের ১৫২ ম্যাচের টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই প্রথম চার উইকেট এটি।
ব্যাটিংয় রাজশাহীর হয়ে দারুণ এক ক্যামিও খেলেন একাদশে ফেরা সাব্বির হোসেন। পরে ছয় ছক্কায় ৩২ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। এবারের বিপিএলে এখনও পর্যন্ত তার ছক্কা ২৪টি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী তৃতীয় ওভারে হারায় মোহাম্মদ হারিসকে (১২ বলে ১৯)। এই নিয়ে রাজশাহীর ১০টি ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন পাকিস্তানি ওপেনার।
১০ ম্যাচের ৮টিতেই দুঅঙ্ক স্পর্শ করেছেন তিনি, কিন্তু সর্বোচ্চ ইনিংস ৩২ রানের।
তিন ম্যাচ পর একাদশে ফেরার সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান সাব্বির হোসেন। তৃতীয় ওভারে রকিবুলের বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন তিনি। এক ওভার পর সাইফ উদ্দিনকে ছক্কার পর দুই চারে স্বাগত জানান ২৭ বছর বয়সী ওপেনার। সপ্তম ওভারে আক্রমণে আসা নাহিদ রানার ১৪৭ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিতে ছক্কা মারেন তিনি চাবুকের মতো ব্যাট চালিয়ে।
৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১৯ বলে ৩৯ রান করে শেষ হয় সাব্বিরের ইনিংস। এনামুলের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ২৯ বলে ৫২ রান।
রায়ান বার্ল গিয়ে প্রথম বলেই বিলিয়ে দেন উইকেট। হ্যাটট্রিক বল ঠেকিয়ে দেন ইয়াসির।
পাঁচ নম্বরে নেমে শুরুতে কিছুটা সময় নেন ইয়াসির। অন্য প্রান্তে এনামুল হকও খোলসে ঢুকে গেলে টানা তিন ওভার বাউন্ডারি পায়নি রাজশাহী।
একাদশ ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান ইয়াসির। শেষ বলে মারেন চার। দুই ওভার পর রকিবুলের বলে পরপর দুটি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। পরে সাইফ উদ্দিনের বলেও দুটি ছক্কা মেরে মাত্র ২৭ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। তার প্রতিটি ছক্কায় টাইমিংয়ের সঙ্গে ছিল পেশির জোরের মিশেল।
তাকে ফিরিয়ে রংপুরকে আবার স্বস্তি এনে দেন সে খুশদিল।
চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়েন ইয়াসির ও এনামুল। যেখানের এনামুলের অবদান ১৮ বলে মাত্র ১৬ রান।
একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল দুইশ ছুঁয়ে ফেলবে রাজশাহী। কিন্তু ইয়াসিরের বিদায়ের পর কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি তাদের ইনিংস। শেষের ২৬ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৮ রান করতে পারে তারা।
সপ্তদশ ওভারে আকবর আলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন এনামুল। ৩১ বলে তিনি করেন ৩৪ রান। আকিফ জাভেদের ওই ওভারের শেষ ডেলিভারিতে বল স্টাম্পে টেনে আনেন আকবর।
রাজশাহীর শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ চার রানের বেশি করতে পারেনি।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখানো খুশদিল এবার ৪ ওভারে ৩১ রানে নেন ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে ৮ ইনিংসে তার শিকার ১৪টি। খুশদিলের স্বদেশি পেসার আকিফ ২৩ রানে নেন ৩ উইকেট। ৭ ইনিংসে বাঁহাতি পেসারের হয়ে গেল ১৫ উইকেট। চলতি আসরে তার ওপরে শুধু তাসকিন আহমেদ।
রান তাড়ায় চার ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। প্রথম ওভারে তাসকিনের বলে বোল্ড হন আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ইরফান শুক্কুর। চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাত করেন এসএম মেহেরব হাসান।
রাউন্ড দা উইকেট থেকে মেহেরবের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হন স্টিভেন টেইলর। পরের বল ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ইফতিখার আহমেদ।
জোড়া উইকেটের ওই ওভারে কোনো খরচ করেননি তরুণ ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
শুরুর চাপ সামাল দিয়ে ২৯ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন খুশদিল ও সাইফ হাসান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মোহর শেখের বলে টানা তিনটি চার মারেন সাইফ। পরের ওভারে সানজামুলের ইসলামের বল ছক্কায় ওড়ান খুশদিল।
নবম ওভারে বোলিংয়ে এসে এই জুটি থামান সাব্বির হোসেন। ছক্কার খোঁজে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন খুশদিল।
ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা মেরে রংপুরের রান রেট প্রথমবার সাতের ওপরে নেন সাইফ। তবে তাকে টিকতে দেননি শফিউল ইসলাম। আগের ম্যাচগুলোতে খরুচে বোলিং করা অভিজ্ঞ পেসারের শর্ট বলে সীমানায় ধরা পড়েন সাইফ। ৫ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করেন ২৯ বলে ৪৩ রান।
পরে বার্লের চমৎকার ফিরতি ক্যাচে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন শেখ মেহেদি হাসান।
একশর আগে ৬ উইকেট হারানো দলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন নুরুল হাসান সোহান। চতুর্দশ ওভারে মেহেরবের শেষ দুই বলে ছক্কা মারেন রংপুর অধিনায়ক। পরের বার্লের বলে মারেন বাউন্ডারি।
শেষ ৪ ওভারে ৪৯ রানের সমীকরণে বার্লের প্রথম পাঁচ বলে বাউন্ডারি মারতে ব্যর্থ হন সোহান ও সাইফ উদ্দিন। শেষ বলে বড় শটের চেষ্টায় উইকেট হারান সোহান (২৬ বলে ৪১)। পরে সাইফ উদ্দিন (১৪ বলে ২৩) কিছুটা কমান ব্যবধান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দুর্বার রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৭০/৯ (হারিস ১৯, সাব্বির ৩৯, এনামুল ৩৪, বার্ল ০, ইয়াসির ৬০, আকবর ২, মেহেরব ৪, সানজামুল ২, তাসকিন ৪, শফিউল ২*, মোহর ৩*; রকিবুল ৪-০-৩৮-১, খুশদিল ৪-০-৩১-৩, আকিফ ৪-০-২৩-৩, সাইফ উদ্দিন ২-০-৩২-০, নাহিদ ৩-০-২৭-১, মেহেদি ৩-০-১৮-০)
রংপুর রাইডার্স: ১৯.২ ওভারে ১৪৬ (টেইলর ৪, ইরফান ০, সাইফ হাসান ৪৩, ইফতিখার ০, খুশদিল ১৪, সোহান ৪১, মেহেদি ৮, সাইফ উদ্দিন ২৩, আকিব ১, রকিবুল ২*, নাহিদ ০; তাসকিন ৩.২-০-২০-২, মেহেরব ৩-১-১৯-২, সানজামুল ৩-০-২৮-০, মোহর ২-০-২৩-০, শফিউল ৩-০-১৬-১, সাব্বির ১-০-১৬-১, বার্ল ৪-০-২২-৪)
ফল: দুর্বার রাজশাহী ২৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রায়ান বার্ল
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন