রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চরে পদ্মার নদীর ভাঙ্গনে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চরে পদ্মার নদীর ভাঙ্গনে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১৬০ পরিবার ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন। উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে এ চরের ভূখণ্ড কমছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা নদী লাগোয়া হঠাৎপাড়া, চর বয়ারমারি, কামারপাড়া, জামাইপাড়া ও আমতলা খাসমহল গ্রামে ভাঙন চলছে। জামাইপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের বাড়ির অর্ধেক নদীতে নেমে গেছে। বাকি অর্ধেক ভেঙে নৌকায় তুলছিলেন সাইদুর।
তিনি আরো জানান, পদ্মার ভাঙনে পড়ে এর আগে দুইবার বাড়ি সরিয়েছেন। এবার আর চরে থাকার মতো নিজের জায়গা নেই। তাই বাড়িঘর ভেঙে ওপারে ভাইয়ের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। চর থেকে বাড়িঘর ভেঙে নৌকায় তুলে সেখানকার বাসিন্দারা গোদাগাড়ীর ফুলতলা ঘাটে এসে উঠছেন।
তিনি জানান, ১৫ বছর আগে একবার বাড়ি সরাতে হয়েছিল ভাঙনের কারণে। এবার আর সরিয়ে বাড়ি করার অবস্থা নেই। চম্পকনগর গ্রামে দুই কাঠা জমি কিনেছেন। এবার সেখানে চলে যাচ্ছেন।
জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি কমার সাথে সাথে ভাঙন খুব। এই কয়দিনে কমপক্ষে ৪ রশি ভেঙে গেল। প্রায় ১৫০ পরিবার এপারে চলে এসেছে। আরও অনেকে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর বাক্স, দড়ির খাট, টিনের চালা, আলনা, চৌকিসহ পরিবারের ব্যবহার্য সব মালামাল নিয়ে তীরে ভিড়ল আরেকটি নৌকা। নৌকায় ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে বসেছিলেন বয়রামারি থেকে আসা গৃহবধূ তাহেরা খাতুন।
তিনি বললেন, ‘ছ’বছর আগে একবার বাড়ি ভাইঙতে হয়েছিল। এখুন আর অন্য জাগা নাই যে বাড়ি কইরব। জন্মের থেকেই চরে থাকি, আর থাকা হলো না।
এপারের কানাইডাঙ্গা গ্রামে ভাসুরের বাড়ি। সেখানেই চলে যাচ্ছি। ভাসুরের বাড়িতে থাইকব। জমিটমি দেখে পরে বাড়ি কইরব।
চর আষাড়িয়াদহ এলাকায় পদ্মার পানির বিপৎসীমা কত, সে তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নেই। তবে রাজশাহী শহর সংলগ্ন এলাকায় পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। এখানে প্রতিদিন পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। সম্প্রতি এখানে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। তারপর পানি কমছে। শনিবার দুপুরে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ মিটার। এখনও চরের অনেক এলাকায় তলিয়ে আছে।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ খুব অসহায় অবস্থায় আছি। সাহায্য-সহায়তা তেমন পাইনি। ১০ কেজি করে চাল দিতে পেরেছি। যার বাড়ি ভেঙে চলে যেতে হচ্ছে, তার কাছে ১০ কেজি চাল কিছুই না। সরকারকে এদের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি চরটাকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে প্রতিবছর যেভাবে চর ভাঙছে, একসময় এটা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। নদী ঢুকে যাবে ভারতে।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির শুরুতে ২০টি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে চর ছাড়ে। পানি কমার সময় এ সংখ্যা ৯০টি। সবমিলিয়ে ১১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত বলে আমার কাছে তথ্য আছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ঢেউটিন সহায়তা দেওয়া হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন