রাণীনগরে দঁড়ি ব্যবসায় সচ্ছল বজলুল রহমান
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরে ঝুট কাপড় থেকে তৈরি দঁড়ি ব্যবসা করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছেন সফল দঁড়ি ব্যবসায়ী বজলুল রহমান। অভাব অনাটনের সংসারে নানান ধরণের কাজ-কাম করে ঘরে নুন আনতে-পাস্তা ফুরাতো ঠিক সেই সময় অন্যান্য কাজ-কর্ম ছেড়ে দঁড়ি ব্যবসার দিকে মনোযোগ দেয় বজলুল। শুরুতেই কম বেশি দঁড়ি পাইকারি নিয়ে বিভিন্ন দোকানে বেচা-কেনা করার এক পর্যায়ে নিজ ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে স্বল্প পুঁজির মধ্য দিয়েও একটি ভটভটি গাড়ি কিনে বেশি পরিমাণ দঁড়ি পাইকারি নিয়ে রাণীনগর সদর থেকে শুরু করে আত্রাই উপজেলার শেষ প্রান্ত পযন্ত বিভিন্ন হাট-বাজারে বসতি দোকান গুলো শ্রেণী ভেদে ছোট-বড় মিলে নানান দামে সে নিজেই পাইকারি দরে সরবারহ করে।
গত পাঁচ বছর ধরে রাণীনগর উপজেলা সদরের পূর্ব বালুভরা, রাজাপুর, বেলবাড়ি, খট্টেশ্বর, চকমনু, পশ্চিম বালুভরা, চকজান সহ বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী সহ পরিবারের সবাই মিলে সংসারের মূল কাজ-কর্ম শেষে পরিবারের একটু উন্নতির জন্য ঝুট কাপড় থেকে নানান মাপের দঁড়ি তৈরি করে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই গ্রাম গুলোতে বিরতিহীন ভাবে চলে দঁড়ি তৈরির কার্যক্রম। স্থানীয় কিছু ঝুট কাপড়ের ব্যবসায়ীরা রাজধানী ঢাকা’র বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ট্রাক যোগে ঝুট কাপড় রাণীনগরে নিয়ে আসে। তারা স্থাণীয় ভাবে কয়েকটি তুলার মিলে পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে যে সমস্ত নারী-পুরুষরা দঁড়ি তৈরির কাজে জরিত আসে তাদের কাছে বিভিন্ন রঙের ঝুট কাপড় কেজি দরে বিক্রি করে। সেখান থেকে বেকার নারী-পুরুষরা সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়ির সদস্যরা মিলে দঁড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করে। বিশেষ করে ঈদ মৌসুম আসলে দঁড়ির দাম ও কদর বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন পূর্ব বালুভরার মোড়ে দঁড়ি কিনতে উপজেলার নানান এলাকা স্থানীয় ছোট-বড় পাইকারসহ খুচরা ক্রেতারা আসে। এখান থেকেই বজলুল রহমান প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ টির মত নানান মাপের ঝুট কাপড় থেকে তৈরি দঁড়ি পাইকারি কিনে সারা দিন বেচা-কেনা শেষে বেশ আয় করে। কি পরিমাণ প্রতিদিন আয় হয় তা জানতে চাইলে বজলুল রহমান পরিমাণের কথা উলেখ না করলেও এই ব্যবসা করে আগের চেয়ে সংসারে অনেক সফলতা এনেছি।
সফল দঁড়ি ব্যবসায়ী বজলুল রহমান জানান, আমার মত স্বল্প পুঁজির লোক এই ব্যবসা করে আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি। তবে পুঁজি সংকটের কারণে বেশি মাল কিনতে পাড়ি না। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে বেশি পরিমাণ মাল কিনে দেশের যে সব জেলায় এর কদর বেশি সেই সমস্ত এলাকায় দঁড়ি সরবারহ করতে পারলে আরও বেশি লাভবান হতাম। কিন্তু নিজ এলাকায় বিক্রি করে তুলনামূলক ভাবে লাভ কম হয়। নানান মাপের দঁড়ি যেমন, ১৬ হাত দঁড়ি রাণীনগরে পাইকারি মূল্য ১২ টাকা, ১২ হাত ৬ টাকা, ৬ হাত তিন টাকা, ১৪ হাত ৮টাকা দরে কিনতে হয়। পাইকারি বিক্রি করে খুব একটা লাভ না হলেও খুচরা বিক্রি করে বেশি লাভ হয়। প্রতিদিন বেচা-কেনা শেষে যে পরিমাণ আয় হয় তা দিয়েই সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছি। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আগামী দিনে এই ব্যবসায় দিনদিন আমার সফলতা বৃদ্ধি পাবে।
এব্যাপারে রাণীনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান পিন্টু জানান, উপজেলা সদরের পূর্ব বালুভরা, পশ্চিম বালুভরা ও রাজাপুর গ্রামে অনেক স্বল্প আয়ের পরিবারের লোকজনরা ঝুট কাপড় থেকে দঁড়ি তৈরির কাজে জরিত। এখানকার তৈরি দঁড়ি ও ঝুট কাপড় গুলো প্রতিদিন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে পাইকারি খুচরা কিনে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেচা-কেনা করে। এর মধ্যে বজলুল রহমান একজন। আমার জানা মতে সে এখাকার দঁড়ি গুলো পাইকারি কিনে রাণীনগরসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা আত্রাই এর বিভিন্ন হাট-বাজারে বসতি দোকানে খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে। এর মত অনেকেই এই ব্যবসা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন