রাত নামলেই উগ্র সুন্দরীদের আগমনে অভিজাত এলাকায় রঙিন উন্মাদনা
রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে তরুণী সম্ভ্রমহানীর ঘটনার ঝড় এখনও বইছে। তবু থামেনি অভিজাত এলাকার অন্ধকার জগতের বেপোরোয়া উল্লাস নৃত্য। প্রভাবশালী ও বিত্তবানদের বখে যাওয়া সন্তানদের এসব রাতভর পার্টির উন্মাদন চলছে। উগ্র সুন্দরী ও মডেলদের ঢল নামছে।
রাত নামলেই শুরু হয় অভিজাত পাড়ার বেপোরোয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনের উপভোগ্য সব মূল্যবোধহীন কর্মকাণ্ড। এমনকি বোম্বের অনেকে দুবাই যেমন করে গিয়ে মুজরার আসর জমিয়ে তুলেছেন তেমনি ঢাকা নগরীতে অভিজাত এলাকার হোটেল ও ফ্ল্যাটগুলোতে চলছে স্থানীয় তারকাদের এমন আসর। রাত নামলেই কাঁচা টাকা উড়ছে। রাত নামলেই অভিজাত পাড়ায় বিত্তবান আর ক্ষমতাবানদের ভোগ বিলাসী বেপোরোয়া জীবনের ইয়াব সেবন থেকে সিসা হয়ে মদ পান, নাচ এমনকি কেনা পার্ট টাইম বান্ধবীদের নিয়ে চলছে রাত্রীযাপন।
নাচ, গান, মদ, রুমপার্টি, পছন্দের বান্ধবী নিয়ে রাতভর একান্ত সময় কাটানো- বহাল আছে সবই। গভীর রাত অথবা ভোরের আলোয় তাদের বেরিয়ে আসার দৃশ্য বিশ্লেষণ করলে ভালো কিছু মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু বনানী নয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকার এমন অনেক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের রমরমা খবর। যেখানে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সবই জায়েজ। তাদেরও কেউ কেউ সেখানকার সম্মানিত অতিথি।
ফলে প্রভাবশালীদের এসব আড্ডাস্থল শেষ রাত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে জমজমাট থাকে। ভেতরে প্রাইভেট পার্টির নামে ধনীর দুলালরা রাজা-বাদশাহদের মতো রীতিমতো সরাইখানা খুলে বসেছেন। পার্টির পরিবেশটা দেখলে তেমনটিই মনে হবে।
এ ধরনের প্রাইভেট পার্টিতে নিয়মিত যাতায়াত করা একজন জানান, নিরাপত্তার জন্য এসব প্রাইভেট পার্টিতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। তিনি জানান, সেখানে সবকিছুই হয়। মদ, ইয়াবা থেকে শুরু করে একান্তে পছন্দের সঙ্গীর সান্নিধ্য পাওয়া যায়। অতিথিদের জন্য আভিজাত্যের সব চাহিদা সেখানে জোগান দেয়া হয়। বিনিময়ে শুধু মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়। যারা দিনের আলোয় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামান তারা ও তাদের ছেলেমেয়েদের অনেকে রাতে এসব পার্টি আড্ডায় অবৈধ টাকা খরচ করেন দেদারসে।
রাজধানীর এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ভাগ্নে। তিনি নিজে পার্টিতে যাওয়া ছাড়াও লাভজনক ভিন্ন এক পেশায় নাম লিখিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শোবিজ তারকাদের পাঠিয়ে থাকেন। কথিত সেলিব্রেটি শো আয়োজনের আড়ালে তিনি এমন অনৈতিক ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। আছেন বেশ ভালোই।
বনানী এলাকায় জনৈক স্যাক্স নামের এক যুবক এখন রাজধানীতে ব্যাপক প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রভাবশালী নেতা পরিচয়ে অভিজাতপাড়ায় প্রাইভেট পার্টির আয়োজন করেন। তার পার্টিতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনেকের নিয়মিত যাতায়াত আছে। মাসুমের সঙ্গে সমাজের প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠতা থাকায় তার হাত অনেক লম্বা। সঙ্গত কারণে প্রশাসনের কেউ তাকে নিয়ে ঘাঁটাতে চান না।
সূত্র জানায়, জনৈক নাট্য পরিচালকের হাতের মুঠোয় আছেন সিনেমাপাড়া থেকে শুরু করে টিভি অভিনেত্রীদের এ সারির অনেকেই। বিশাল আয়োজনের টিভি নাটক বানানোর নামে মডেল অভিনেত্রীদের তিনি বশে আনেন। এরপর তাদের অনেককেই এসব প্রাইভেট পার্টিতে নিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, রাজধানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে একটি বড়সড় ফ্যাশন হাউস চালান জনৈক হিরো নামের এক যুবক। তিনি নিজেও একজন প্রথম সারির ইয়াবা আসক্ত। উঠতি মডেলদের অনেকেই তার হাতের মুঠোয় বন্দি। তাই কারও কারও কণ্ঠে শোনা যায়, হিরো না থাকলে অনেক প্রাইভেট পার্টি রঙিন হয়ে ওঠে না। জানা গেছে, গুলশানের ‘ডলি আপা’ নামের অভিজাত এক নারীর হাতও নাকি অনেক লম্বা।
কারণ প্রতি রাতেই তার অতিথি হন প্রভাবশালীদের অনেকে। এছাড়া তার সঙ্গে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতার কথা এ জগতের কারও অজানা নয়। বনানী থানা পুলিশ জানায়, হাইপ্রোফাইলের চাপ সামলাতে না পেরে এক পর্যায়ে বনানীর ফ্লোর সিক্স নামের একটি সিসা লাউঞ্জ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। কারণ একাধিক মেয়ে বন্ধু নিয়ে সেখানে নিয়মিত আড্ডা জমাতেন সরকারদলীয় কয়েকজন তরুণ জনপ্রতিনিধি।
সঙ্গত কারণে তাদের নামের আগে থাকা বিশেষ পরিচিতি প্রকাশ করা হল না। মাঝে মাঝে সেখানে যেতেন জনৈক মনির। যিনি এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাগ্নে। নানা শঙ্কায় থানা পুলিশ সেটিকে কৌশলে বন্ধ করে দেয়।
রাজধানীর কয়েকটি অভিজাত হোটেলে দাপুটে ঘোরাফেরা ডেভিল নামের জনৈক ডিস্কো জকির (ডিজে)। প্রাইভেট পার্টি জগতে তিনি ডিজে ডেভিল নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম কাজী হাসিব। এছাড়া সাজু হাসান ওরফে গাড়ি হাসান নামের এক ধর্ণাঢ্য যুবক মাঝে মাঝে ঢাকায় আসেন এসব পার্টির স্বাদ নিতে। উত্তরবঙ্গের ছেলে হলেও সাজু হাসান পার্টিতে এসে দু’হাতে টাকা ওড়ান। শুনতে অবাক মনে হলেও তিনি নাকি প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিজাত এলাকার এসব অন্ধকার জগতে অনেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ছেলেমেয়েরাও জড়িয়ে পড়ছেন। মানসম্মানের ভয়ে অনেকের পরিবার এ নিয়ে মুখ খুলে না। আবার বখে যাওয়া সন্তানদের এসব নিশুতি পার্টি থেকে ফেরাতেও পারছেন না। অনিক নামে জনৈক এক সচিবের ছেলেও প্রাইভেট পার্টিতে জড়িয়ে নিজের সবকিছু খুইয়েছেন।
জনৈক একজন সংসদ সদস্যের ছেলে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে প্রথম সারির বখাটেদের তালিকায় চলে আসেন। এক পর্যায়ে সেখানে নিয়মিত ইয়াবা সেবনকারী হিসেবেও পরিচিতি পেয়ে যান। ক্ষমতার দাপটে মাথাটা বড্ড গরম। তাই একদিন রাতে কাবানা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রিকশাচালককে গুলি করে বসেন। এভাবে গত বছর রাজধানীর আলোচিত ক্রাইম লিস্টে তার এ ঘটনাটি জায়গা করে নেয়।
সূত্র জানায়, অভিজাত প্রাইভেট পার্টির সুবাদে দরিদ্র পরিবারের অনেক তরুণীরও ভাগ্য খুলে গেছে। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ কান্তা নামের এক পার্টি গার্ল। তিন বছর আগেও ঠিকমতো বাসা ভাড়া দিতে পারতেন না। প্রাইভেট পার্টির বদৌলতে তারও ভাগ্য বদলেছে। রুদ্র নামে জনৈক কোটিপতির ছেলে তার প্রেমের ফাঁদে পা দেন।
এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তার সবই হয়েছে। রুদ্রের কাছ থেকে চাহিদামাফিক অঢেল টাকাও পান কান্তা। মাসের বেশির ভাগ দিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান তিনি।
ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ‘প্রাইভেট হাউস পার্টি’র কয়েকজন আয়োজকের নামও এসেছে গণমাধ্যমে। সূত্র জানায়, প্রাইভেট পার্টিতে সোসাইটি গার্ল সরবরাহ করে দরিদ্র ঘরের সন্তান আরজু রনি ওরফে কালা রনি এখন কোটিপতি। অবশ্য কালা রনির একাধিক কথিত প্রেমিকাও আছে। এদের মধ্যে পুতুল নামের এক তরুণীর সঙ্গে তাকে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়।
সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলছেন, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’শিক্ষার্থী সম্ভ্রমহানীর ঘটনার পেছনে অভিজাত এলাকার এসব কদর্য চেহারা অনেকখানি দায়ী। এজন্য এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে গলে প্রথমে পরিবার, তারপর সমাজ থেকে মাদককে সমূলে বিদায় জানানোসহ আধুনিকতার নামে ছেলেমেয়েদের বেপরোয়া জীবনযাপনের লাগাম টেনে ধরতে হবে। তা না হলে বনানীর মতো এ রকম ঘটনা বাড়বে বৈ কমবে না। পূর্ব-পশ্চিম নিউজ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন