রাশিয়াকে মাটিতে নামিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে ৫ গোল এবং পরের ম্যাচে মিসরের বিপক্ষে ৩ গোল করে রীতিমত আকাশে উড়ছিল স্বাগতিক রাশিয়া। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর হয়ে নিজেদের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল তারা।
কিন্তু সামারা এরেনায় আর টেকেনি রাশিয়ানদের উড়ন্ত ফর্ম। সুয়ারেজ-কাভানির জোড়া ও রাশিয়ান তারকা চেরিশেভের আত্মঘাতী গোলে ৩-০ গোলের সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে উরুগুয়ে। এই জয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট পেয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষ দল হয়েই পরের রাউন্ডে যাচ্ছেন সুয়ারেজরা। ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের পর্বে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে সৌদি আরব ও মিসরের বিপক্ষে ৮টি গোল করেছিল রাশিয়া। বিপরীতে হজম করেছিল মাত্র ১টি। অথচ উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধেই তাদের জালে বল ঢুকেছে ২ বার। ম্যাচশেষে ফলাফল ৩-০ গোলে জিতেছে উরুগুয়ে।
jagonews24
নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে রাশিয়ার ঠিক উল্টো চিত্রই ছিল উরুগুয়ের। সৌদি আরব ও মিসর; দুই দলের বিপক্ষেই ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয় পেয়েছিল লাতিন আমেরিকার দেশটি। সেই উরুগুয়েই উড়তে থাকা রাশিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধেই করে ২টি গোল। বিরতির পর করে আরও একটি। তিন গোলের জয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা দল হয়েই পরের রাউন্ডে চলে গেল উরুগুয়ে।
সামারা এরেনায় ম্যাচের শুরু থেকেই রাশিয়ান রক্ষণে চেপে ধরতে শুরু করে উরুগুয়ে। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই ডি বক্সের বাইরে থেকে দুরপাল্লার শট নেন ম্যাতিয়াস ভেনিক। অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় সেটি। মিনিটখানেক বাদে ডি বক্সের কাছে ফ্রিকিক পেয়েও কোন কাজ করতে পারেনি উরুগুয়ে।
তবে দশম মিনিটে ফ্রিকিক পেয়ে কোন ভুল করেননি লুইস সুয়ারেজ। ডি বক্সের একদম কাছে ইউরি গ্যাজিনস্কি রদ্রিগো ভেনটাঙ্কুরকে ফাউল করলে ফ্রিকিক পায় উরুগুয়ে। ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ভেনটাঙ্কুর। বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রিকিকে দলকে এগিয়ে দেন বার্সেলোনার তারকা সুয়ারেজ। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় গোল।
গোল হজম করে পাল্টা আক্রমণে মেতে ওঠে স্বাগতিকরা। ১২তম মিনিটে ডেনিস চেরিশেভের শট ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা। ১৭তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্ণায় পায় রাশিয়া। কিন্তু জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি তারা।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে এগুতে থাকে ম্যাচ। ২৩তম মিনিটে নিজেদের জালেই বল ঢুকিয়ে দেন ডেনিস চেরিশেভ। দিয়েগো ল্যাক্সালতের বুলেট গতির শট চেরিশেভের পায়ে লেগে ঢুকে যায় রাশিয়ার জালে। ২৩ মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় উরুগুয়ে।
ম্যাচের ২৮তম মিনিটে নিজের প্রথম ও ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ইগোর স্মলনিকভ। এক মিনিট বাদেই ভেনটাঙ্কুরের শট ঠেকিয়ে দেন রাশিয়ান গোলরক্ষক আকিনফিভ। ৩১তম মিনিটে ফ্রিকিক পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন রাশিয়ার রোমান জবনিন।
২ গোলে পিছিয়ে থাকা রাশিয়ার কাজ আরও কঠিন হয়ে যায় ৩৬তম মিনিটে স্মলনিকভ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখলে। দুই হলুদ কার্ডের কারণে লাল কার্ডে পরিণত হয়। মাত্র ৩৬ মিনিটেই দশজনের দলে পরিণত হয় রাশিয়া।
রাশিয়ার দশজনের বিপক্ষে প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোন গোল করতে পারেনি উরুগুয়ে। স্বাগতিক রাশিয়াও পারেনি উরুগুয়ের রক্ষণে ফাটল ধরাতে। ফলে উরুগুয়ের ২-০ গোলের লিডেই শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধ।
বিরতি থেকে ফিরে ঢিমেতালে খেলতে থাকে দুই দল। প্রথম দশ মিনিটে হয়নি তেমন কোন আক্রমণ। ছোট ছোট উত্তেজনা আর মাঝ মাঠ দখলের লড়াইয়ে এগুতে থাকে ম্যাচ। ৫৯তম মিনিটে রদ্রিগো ভেনটাঙ্কুরের শট ডি বক্সের মধ্যে দুর্দান্ত ডিফেন্ডিংয়ে ঠেকিয়ে দেন রাশিয়ার ডিফেন্ডার।
এর মিনিটখানেক বাদেই ম্যাচে উরুগুয়ের পক্ষে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ভেনটাঙ্কুর। ৬৮তম মিনিটে দুরপাল্লার শট নেন ডিফেন্ডার দিয়েগো গোডিন। কিন্তু বারের ডানপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় সেই শট। এক মিনিট পর একইভাবে গোল মিস করেন এডিনসন কাভানি।
৭৪তম মিনিটে গোলের সহজতম সুযোগ পায় রাশিয়া। কিন্তু ডি বক্সের মধ্য থেকে আর্তেম জিউভা শট নেন বারের অনেক উপর দিয়ে। ৮০তম মিনিটে রাশিয়ান ডিফেন্ডারের ভুল পাসে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন কাভানি। সুয়ারেজের সাথে পাস দেয়া-নেয়া করায় বেশি সময় খরচ করে ফেলেন সেই আক্রমণে। যার ফলে তৃতীয় গোল থেকে বঞ্চিতই থাকে উরুগুয়ে।
৮৪তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল রাশিয়া। বক্সের বাম পাশ থেকে রাশিয়ার করা আক্রমণটি সুনিপুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা। ৮৬তম মিনিটে সরাসরি কর্ণার থেকে গোল পেয়ে যাচ্ছিল উরুগুয়ে, তবে ঠেকিয়ে দেন রাশিয়ান গোলরক্ষক।
ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের ঠিক আগে চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলটি করেন উরুগুয়ের তারকা ফরোয়ার্ড এডিনসন কাভানি। দিয়েগো গোডিনের হেড রাশিয়ার গোলরক্ষক ফেরালেও, ফিরতি বলে পা লাগিয়ে গোলের তালিকায় নিজের নাম লেখান কাভানি।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার কিছুক্ষণ আগে দারুণ আক্রমণ সাজিয়েছিল উরুগুয়ে। কিন্তু রাশিয়ান ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় গোলের সংখ্যা আর বাড়েনি। ৩-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে উরুগুয়ে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন