রাশিয়া-চীনের নতুন সমীকরণ!

ইউক্রেন ইস্যুতে চাপের মুখে রয়েছে রাশিয়া। এই ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মাথায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বয়ং পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

অন্যদিকে, চীনের সঙ্গেও পশ্চিমাদের সম্পর্কটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমাদেশগুলো দেশটিকে কূটনীতিকভাবে বয়কট করেছে।

এসবের মধ্যেই বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীন সফরে গিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের তরফ থেকে পর্বতসমান সমালোচনার মুখোমুখি দেশ দুটির প্রধানের এই বৈঠক তাদের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ককেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এদিকে, চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনের আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে মুখ খোলেন পুতিন।

জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে পুতিন টেলিভিশনে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, বেইজিংয়ের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক ‘বন্ধুত্ব ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের পথে ক্রমবর্ধমানভাবে বিকশিত হচ্ছে।’

রুশ এই নেতা বলেন, তারা (চীন) সত্যিই অতুলনীয় প্রকৃতির। এ সময় চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ‘একটি মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পুতিন।

বৈঠকের প্রাক্কালে পুতিন বলেন, রাশিয়া থেকে চীনে ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত মস্কো।

পুতিনের বেইাজিং সফরের আগে ক্রেমলিনের এক সূত্র জানিয়েছিল, দুই নেতা নিরাপত্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া নিয়ে নেওয়ার পর আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো যখন রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখনও প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনের দিকে তাকিয়েছিলেন এবং সাড়া পেয়েছিলেন।

আমেরিকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেইজিং শুধু তেল এবং গ্যাস কেনা নিয়েই মস্কোর সঙ্গে চারশো’ বিলিয়ন ডলারের (৪০,০০০ কোটি ডলার) চুক্তি সাক্ষর করে। ওই চুক্তিই সেই সময়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ভরাডুবি থেকে থেকে বাঁচিয়েছিল।

অবশ্য রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল নিয়ে চীন অস্বস্তিতে পড়লেও সস্তায় এবং সহজ শর্তে রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ কেনার সুযোগ তারা তখন হাতছাড়া করেনি বলেই অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন।

এদিকে, দুই দেশেরই কমন বা অভিন্ন শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই শত্রুতাই জিনপিং-পুতিনকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

এই অভিন্ন শত্রুকে মোকাবেলার কৌশল হিসেবেই একজোট হয়ে ব্যবসা-অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক গত বছরগুলোতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

রাশিয়ার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান ক্রেতা চীন এখন। রাশিয়ার আধুনিক অস্ত্রের বড় ক্রেতাও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশ। এমনকি রাশিয়ার রপ্তানি আয়ের ২৫ শতাংশ আসে চীন থেকে।