রাস্তায় চলতে হবে কীভাবে, স্কুলেই শিখবে শিশুরা
সড়কে কীভাবে চলতে হবে, নিরাপদে কীভাবে রাস্তা পার হতে হবে এসব বিষয়ে আইন থাকলেও তা মানার লোক কয় জন? পরিণতিতে প্রাণও ঝরছে নিয়মিত, কিন্তু হুঁশ ফিরছে কই? অসচেতন মানুষকে কীভাবে শিক্ষা দেয়া যায়? এই চিন্তায় শৈশব থেকেই শুরুর কথা ভাবছে সরকার। পাঠ্যবইয়েই এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরিবহন আইন মানার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাচলের পাশাপাশি পথচারীরাও যেন যেনতেনভাবে পথ না চলেন সে জন্য নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন তিনি। এর মধ্যে বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি।
গত ৩০ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ২০১৯ সালে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয় গেছে আগেই। এ কারণে আগামী বছর আর কিছু করা যাচ্ছে না। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকেই স্কুলের ছাত্ররা স্কুলেই পড়বে কীভাবে রাস্তা পার হতে হবে, যানবাহনে উঠানামায় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
সরকারের শেষ বছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন আর রাজনীতি যেখানে থাকার কথা মনযোগের কেন্দ্রে, সেখানে হঠাৎ করেই আলোচনায় স্থান নিয়েছে নিরাপদ সড়ক, যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা আর ট্রাফিক আইন মানা-না মানার বিষয়টি।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর যেখানে চার থেকে সাত হাজার মানুষের মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে, সেখানে দুই জন কলেজ ছাত্রের মৃত্যু ছাত্রদের এমনভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলে যে এক সপ্তাহ রাস্তা বন্ধ রেখে নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে বেশ বড়সড় ঝাঁকুনি দিয়েছে তারা।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী। পরদিন থেকে রাস্তায় নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা। এক পর্যায়ে আলোচনায় উঠে আসে রাজধানীতে গণপরিবহনের নৈরাজ্য, লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালনা, যানবাহনের ফিটনেসের বিষয়টি। আবার কথা উঠে পথচারীদের যেমন খুশি তেমন চলার বিষয়টি।
সড়ক দুর্ঘটনায় আপাতত আক্রমণের মুখে পরিবহন চালক। তবে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইউনিট বলছে, কেবল অসচেতনভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তত মানুষ দুর্ঘটনার কোনো একটি দিকে মারা যায় না। সড়কে যত মৃত্যু হয় তার ৪২ শতাংশই নিহত হয় যানবাহন না দেখে দৌড়ে পার হতে গিয়ে।
এই বাস্তবতায় পাঠ্যক্রমে ট্রাফিক আইন অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবিকে চিঠি দিয়েছে তারা।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এনসিটিবিতে চিঠি দিয়েছি।’
কবে থেকে পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক রুলস সংযোজিত হবে, এমন প্রশ্নে উপসচিব বলেন, ‘২০২০ সালে যে বই বাজারে আসবে সেই বইতে নতুন ট্রাফিক রুলস সংযোজন হবে। শুধু ট্রাফিক রুলসই নয় আরও অনেক বিষয় এতে সংযোজিত হবে।’
২০১৯ সালের বইতে কেন সংযোজন হবে না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের বই এখন ছাপানোর কাজ চলছে। সুতরাং এখন আর সংযোজন করার কোনো উপায় নেই।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি। জারি হয়ে থাকলে অবশ্যই পাব। পেলেই পদক্ষেপ শুরু হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন