রায়ের দিন বিএনপিকে জড়ো হতে দেবে না পুলিশ
বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় সারাদেশে পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যদার কর্মকর্তাদের কাছে সতর্ক করে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও বিএনপি যেন সভা-সমাবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর হতে বলা হয়েছে।
সদর দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই রায়কে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে পুলিশ প্রশাসন। রায়ে যদি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হয়, তাহলে প্রতিবাদে বিএনপি ও জোটের শরিকরা রাজপথে নেমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এই বিষয়টি নিয়ে আগাম প্রস্তুতি, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপপত্তা জোরদার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সার্বিক পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গতিবিধির ওপর নজরদারির পাশাপাশি জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় শহরগুলোর নেতাকর্মীরাও কী করছেন তা তদারকির কথা বলা হয়েছে।
রায়ের দিন পুরান ঢাকার আদালত এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানীর সব থানা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় বিশেষ সতর্কতা নেয়া হবে।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দেয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতারা সাজা হলো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে সারাদেশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে ঢাকায় আসার নির্দেশনাও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে নেতা-কর্মীদেরকে যতটা সম্ভব জড়ো করেই রায় শুনকে যাবেন খালেদা জিয়া। তবে পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে জড়ো হতে বাধা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে।
রায়ের পাঁচ দিন আগে শনিবার রাজধানীতে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় বিএনপির একজন নেতা খালেদা জিয়ার সাজা হলে স্বেচ্ছা কারাবরণসহ নানা কর্মসূচির কথা বলেছেন। বলেছেন, যদি পুলিশ গ্রেপ্তার না করে, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করা হবে খালেদা জিয়াকে।
গত পাঁচ বছরে বিএনপি দুইবার আন্দোলনে নেমেছে। একবার ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে এবং ২০১৫ সালে সরকার পতনের জন্য। দুইবার আন্দোলনেই ব্যাপক সহিংসতা, নাশকতা হয়েছে। হামলা হয়েছে সরকারি সম্পত্তিতে। ব্যাপকভাবে পেট্রল বোমা সারা হয়েছে যানবাহনে। পুড়ে মরেছে পাঁচশর মতো মানুষ। যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে শত শত।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারও রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন তারা। তিনি বলেন, ‘রায়কে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এরই মধ্যে। ওই দিন রায়ে যদি খালেদা জিয়া মুক্তি পান, তাহলে নেতা-কর্মীরা উল্লাস করবেন। সে ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু যদি তার সাজা হয়, তাহলে নেতাকর্মীরা অবশ্যই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। এ ক্ষেত্রেই জননিরাপত্তা বিঘিœত হওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে।’
আপনারা কী ধরনের আশঙ্কা করছেন-এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগের মতোই তারা (বিএনপির নেতা-কর্মীরা) যানবাহনে ভাঙচুরসহ সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতামূলক হামলা চালাতে পারে। সুযোগ পেয়ে জামায়াত-শিবিরও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।’
মোকাবেলায় পুলিশের প্রস্তুতি কী-এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সব দিক বিবেচনায় রেখে আগেভাগেই পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
ডিআইজি পদমর্যাদার এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে সব জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় শহরগুলোর পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের গতিবিধি নজরদারির মধ্যে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘রায়ের দিন জেলাগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন কোনো সভা-সমাবেশ করতে না পারে পুলিশ সুপারদের সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘ওই দিন রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেবে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হবে।’
‘আদালত এলাকাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পুলিশের সব ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।’
ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, কারও বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টির অপচেষ্টার আভাস পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার করতে শীর্ষপর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘সারাদেশে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওইদিন সকল স্থানে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলোকে সচল রাখা, পরিবহনখাতে যাতে কোন নৈরাজ্য না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া, রাজপথে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অধিকতর নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে।’
জেলা পর্যায়ে কত দফা নির্দেশনা গেছে- এমন প্রশ্নে সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘কোনো দফা নেই। যার যার এলাকার পরিবেশ অনুযায়ী সেই কর্মকর্তা সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন। শুধুমাত্র তাদেরকে সতর্ক হয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের কোন নির্দেশনা আমরা হাতে পাইনি। তবে ওইদিনের কথা মাথায় রেখে আমরা নিজেরাই সতর্ক রয়েছি।’
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘প্রিজনভ্যানে হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের পর থেকেই আমরা সতর্ক। গোয়েন্দাদের আরও বেশি মাঠে নামানো হয়েছে। আর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সব সময়েই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চিঠি পেয়ে থাকি। এটা আলাদা কিছু নয়। ’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন