রিজার্ভ চুরি: যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশের মামলা
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, মামলায় ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থের সুবিধাভোগী আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া অর্থসহ মামলার খরচ দাবি করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নিউইয়র্কের সময় ৩১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আর বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতের প্রথম প্রহরে মামলাটি করা হবে।
গত রোববার রাতে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিউইয়র্কে যান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ছাড়াও চার সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে।
ওই চুক্তিতে মামলার ব্যাপারে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড বাংলাদেশ ব্যাংককে সব ধরনের সহায়তা দেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা পরিচালনার জন্য নিউইয়র্কে দুটি ল’ ফার্ম নিয়োগ করেছে।
এর আগে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সাংবাদিকদের বলেন, সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের একটি প্রতিনিধিদল এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছে।
গভর্নর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করাই এ মামলার উদ্দেশ্য।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এ অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো যায় এবং তা ফেরতও পাওয়া যায়।
তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। পরে ওই অর্থের দেড় কোটি ডলার জুয়ার আসর থেকে ফিলিপিন্স সরকার তুলে ফেরত দিলেও বাকি অর্থ পাওয়া যায়নি।
গভর্নর বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা থেকে যারা লাভবান হয়েছে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের এ মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির এ ঘটনা ফিলিপিন্সেও সাড়া ফেলেছিল। তারাও ঘটনার তদন্ত করে একটি মামলা করে।
যে ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ জুয়ার টেবিলে গিয়েছিল, সেই আরসিবিসির কর্মকর্তা মায়া সান্তোস দেগিতোকে সম্প্রতি দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির আদালত।
ওই ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ গত তিন বছরেও আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন