রেলের আধুনিকায়নে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
দেশের রেলপথকে আরও আধুনিক, আরামদায়ক, যাত্রীদের জন্য নিরাপদ করতে এবং আরও উন্নত সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ধরনের উদ্যোগ রেলপথে চলাচলকারী মানুষকে উজ্জীবিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, রেলের গুণাগুণ সম্পন্ন লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এবং যাত্রীবাহী ক্যারেজ সরবরাহ, যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য নতুন ট্রেন পরিচালনা ও বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়ানোই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে (জিওবি) ৩৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৪১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা যোগান দেওয়া হবে। ইডিসিএফ (দক্ষিণ কোরিয়া) এ প্রকল্পের প্রকল্প সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা। প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক বাস্তবায়ন করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে প্রকল্পটি আগামী ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে মিটার গেজ সেকশন এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একেনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৮৬টি মিটার গেজ ও ৯৬টি ব্রড গেজসহ মোট ২৮২টি লোকোমোটিভ রয়েছে। মেকানিক্যাল কোড ও ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লোকোমোটিভসমূহের অর্থনৈতিক মেয়াদ ২০ বছর। যার মধ্যে ১৬৮টি (১১০টি মিটার গেজ ও ৫৮টি ব্রড গেজ) ইঞ্জিনের বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করেছে। চাহিদার কারণে ব্যয় বহুল মেরামত ও অধিক জ্বালানি ব্যয়ের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনসমূহ চালানো হচ্ছে। এছাড়া অনেক পুরাতন মডেলের হওয়ায় মেইনটেন্যান্স পার্টস সহজলভ্য নয়। চাহিদা ও অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনায় পুরাতন ইঞ্জিনসমূহ বহর হতে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১ হাজার ১৬৫টি যাত্রীবাহী মিটার গেজ ক্যারেজ রয়েছে। মেক্যানিক্যাল কোড ও ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যাত্রীবাহী ক্যারেজের অর্থনৈতিক মেয়াদ ৩৫ বছর। যার মধ্যে ৪৫৬টি যাত্রীবাহী কোচের বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে, ১৩৫টির মেয়াদ ৩১ থেকে ৩৪ বছর। যাত্রী চাহিদার কারণে মেরামতের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচসমূহ ব্যবহার করা হলেও তা আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন আরামদায়ক ও নিরাপদ নয়। চাহিদা ও অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনায় অনেক আগেই পুরান কোচসমূহের বহর থেকে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোচ স্বল্পতার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ পুরান জরাজীর্ণ ২০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন ও ১৫০ যাত্রীবাহী মিটার গেজ কোচ প্রতিস্থাপনের জন্য বিবেচ্য প্রকল্পটি ১ হাজার ৮৮১ কোটি ০৬ লাখ টাকা (জিওবি ৪০০ কোটি ৯৫ লাখ + ইডিসিএফ ঋণ ১ হাজার ৪৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা) প্রাথমিক ব্যয় ধরে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই এই প্রকল্পটির বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করে তা আবার পাঠানো হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপি’র প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি ১০ লাখ (জিওবি ৩৮৪.৪২৬৫ কোটি+ইডিসিএফ ঋণ ১৪১৪.৬৭৮৮ কোটি) টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জুন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ করা, পুরান ও মেয়াদোত্তীর্ণ মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন এবং যাত্রীবাহী ক্যারেজসমূহ প্রতিস্থাপন এবং মিটারগেজ সেকশনে রোলিং স্টকের স্বল্পতা দূর করা, যাত্রীদের জন্য আধুনিক, নিরাপদ ও উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন ইঞ্জিন এবং যাত্রীবাহী ক্যারেজ সরবরাহ করা, যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য নতুন ট্রেন পরিচালনা করা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়াতেই এ প্রকল্পটি নিয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হবে। ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ করা ছাড়াও ইঞ্জিন কেনার জন্য চার জন পরামর্শকের সেবা গ্রহণ করা হবে।
রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও নির্দেশনায় রেলের উন্নয়ন চলছে। রেলকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতেই এই বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রেলকে আরও আধুনিক ও আরামদায়ক করতে আগামীতে এ ধরনের প্রকল্প আরও নেওয়া হবে— কারণ রেলের সেবা বেড়েছে, বেড়েছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন