রোহিঙ্গাদের জন্য ১৫৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের চলতি বছরের জরুরি মানবিক চাহিদা পূরণে ১৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস মঙ্গলবার রাতে এ বিবৃতি প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়, ‘শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সব নাগরিকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট ও দুর্দশা নিরসনে নতুন মানবিক সহায়তা হিসেবে আমরা প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা করছি, তবে আরও সহায়তা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় ২০২১ সালের যৌথ কার্যক্রম পরিকল্পনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা শরণার্থী, বাংলাদেশের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি সহায়তা অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

‘আমাদের সহায়তা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ভয়াবহ সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুসহ ৯ লাখ শরণার্থীর অতি প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।’

ব্লিনকেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় প্রধান দাতাদেশ হিসেবে নৃশংসতার শিকার ও সংকটাপন্ন অন্যান্য নাজুক মানুষদের জন্য সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই অর্থ সহায়তা নিয়ে ২০১৭ সালের মার্চে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত সহিংসতার পর থেকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও এ অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে সংকটাপন্ন মানুষদের জন্য আমাদের সর্বমোট মানবিক সহায়তার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩ বিলিয়ন ডলারে।

‘যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত কার্যক্রমে দেয়া ১.১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই সংকটে ব্যাপক অর্থায়ন চাহিদা থাকার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছু সদস্য দেশের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে দেয়া অর্থ সহায়তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও প্রচেষ্টা নেয়ার জন্য উৎসাহিত করছি এবং সেই সঙ্গে অর্থ সহায়তা দেয়ার জন্য অন্যান্য দেশ ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এই কার্যক্রমের কারণে আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর ওপর, বিশেষত বাংলাদেশের ওপর যে ব্যয়ভার ও দায়-দায়িত্ব এসে পড়েছে সেগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত আছে। এ অঞ্চলের যেসব দেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে তাদের জন্য আমরা আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব।

‘গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ও বর্বরোচিত সামরিক অভিযান পরবর্তী পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আমরা আমাদের অঙ্গীকার বজায় রাখব। আমরা জানি, এই অভ্যুত্থানের বহু হোতা আর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোসহ আগের অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ীরা আসলে একই ব্যক্তি।

‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অভ্যুত্থান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগে সহায়তা দিতে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখব।

‘আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত গঠন এবং তাদের ভবিষ্যৎ বিষয়ক আলোচনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দেয়া অব্যাহত রাখব। তা ছাড়া বার্মার অভ্যন্তরে সংকটাপন্ন মানুষদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব অব্যাহত রাখব।

‘শরণার্থীদের সুরক্ষায় বিশেষত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এই সময়ে তাদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন এমন কোনো পরিস্থিতির ‍সৃষ্টি না হয় যাতে তারা অন্য কোনো দেশে গিয়ে নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সব মানুষের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’