রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে না মিয়ানমার
রোহিঙ্গা প্রশ্নে খুব জলদি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা মিয়ানমারের নেই। গত ৮ জুন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দেশটির সমাজকল্যাণমন্ত্রী উয়িন মিয়াত পশ্চিমা কূটনীতিকদের এ কথা জানান।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে চ্যানেল নিউজ এশিয়া। এতে বলা হয়, কফি আনান কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু নাগরিকত্ব নিশ্চিতের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না দেশটি। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিল কমিশন।
মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা বহু প্রজন্ম ধরে বাস করা রোহিঙ্গাদের কোনো নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে ‘বাঙালি’ বলে ডাকে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনেই প্রথম রোহিঙ্গাদের পরিচয় বিলোপ করা হয়।
ওই আইনে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের সিটিজেন, অ্যাসোসিয়েট এবং ন্যাচারাইজড হিসেবে ভাগ করা হয়। ১৯৮৩ সালের পর দেশে আগতদের অ্যাসোসিয়েট এবং ১৯৮২ সালে নতুন করে আবেদনকারীদের ন্যাচারাইজড আখ্যা দেওয়া হয়। আইনটির ৪ নম্বর প্রভিশনের শর্তে বলা হয়- আদালত নয়, জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’।
ডেনমার্কের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউঙ তুন। আনান কমিশনের সুপারিশ যতটুকু সম্ভব ততটুকুই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। অবশ্য রয়টার্সের এক ই-মেইলের জবাবে তিনি দাবি করেন, ১০ মাসের মধ্যে ৮৮টি সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে। যেগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিনিধি বলেন, রাজনৈতিক ও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কমিশনের আটটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করছে না ইয়াঙ্গুন প্রশাসন।
মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তারা করবে না। তবে তিনি বলেন, এই ইস্যুতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি, সাম্প্রদায়িক ও সুশীল নেতাদের ক্ষমতায়ন ও সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার শর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি হয়। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা এখনো মিয়ানমার সরকার গ্রহণ করেনি।
অনেক রোহিঙ্গা নেতাই জানিয়েছেন, তারা নাগরিকত্বের বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেলে ফিরে যাবে না। মিয়ানমারে গত ২০১৪ সালের আদমশুমারিতে রোহিঙ্গাদের বাদ এবং নির্বাচনে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়। গত বছরের ২৫ আগস্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) পুলিশ চৌকিতে হামলার জবাবে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন