রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন : পোপ কে?

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার মাঝে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে ঐতিহাসিক সফরে রয়েছেন খ্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখার প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। দুই দেশের সীমান্তের বিশাল শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক করছে : পোপ কে?

ক্যাথলিক চার্চের এই প্রধান রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের সমর্থনে বারবার কথা বলেছেন; যারা রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করছে বলে অভিযোগ করছেন।

মঙ্গলবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মিয়ানমারের এই সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে রাখাইনে নৃশংস অভিযান চলছে; জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের ভেতরের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপের কথা উল্লেখ করতেই অনেকের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে এবং অনেকেই ভ্রূ চমকাচ্ছেন।

বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, পোপের একটি ছবি দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়; ছবির এই ব্যক্তি কে। জবাবে রোহিঙ্গাদের অনেকেই অনুমান করে বলেন, ছবির এই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের একজন সেলিব্রেটি অথবা ধনাঢ্যশালী রাজা অথবা বাংলাদেশের একজন রাজনীতিক।

তবে পোপের মাথায় টুপি দেখে অনেকেই ধারণা করছেন, তিনি কোনো মুসলিম নেতা হতে পারেন। ৪২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী নুরুল কাদের বলেন, আমার মনে হয়, তাকে সংবাদে দেখেছি। কিন্তু তিনি কী করেন? তিনি কী গুরুত্বপূর্ণ কেউ?

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে তিনদিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আসছেন পোপ ফ্রান্সিস। গত ৩১ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো ক্যাথলিক চার্চ প্রধান বাংলাদেশ সফর করছেন। এর আগে দুর্দশার খবর শুনে ভ্যাটিকানে এক প্রার্থনায় রোহিঙ্গাদের ‘ভাই-বোন’ বলে সম্বোধন করলেও মিয়ানমার সফরে এসে একবারের জন্যও রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে আনেননি।

বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর ঢাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুক্রবার আন্তঃধর্মীয় বৈঠকের সময় সাক্ষাৎ করবেন পোপ। তবে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবেন না তিনি।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে সেনাবাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

সূত্র : এএফপি।