রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করছে ভারত! (ভিডিও)
আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা : ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানো (পুশব্যাক) হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩৯ জন রোহিঙ্গাকে পাঠানো হয় বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশের হাতে আটক হওয়া ৩৯ রোহিঙ্গার মধ্যে ১২ জন নারী, ১০ জন পুরুষ ও ১৭ জন শিশু রয়েছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে সাতক্ষীরা সীমান্তের পদ্মশাখরা এলাকায় ভারত থেকে আসা ১৯ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যরা। তাদের মধ্যে ১০ জন শিশু,ছয় জন নারী ও তিন জন পুরুষ রয়েছেন। আটক ব্যক্তিরা হচ্ছে- মরিয়ম বেগম, আসমা খাতুন, রাশিদা খাতুন, সুমাইয়া বেগম, গুলশান আরা খাতুন, জাইনুল বেগম, মো. আলাউদ্দিন, আব্দুর রহিম ও এনায়েত আলী। অবশিষ্ট ১০ জন শিশু, তাদের বয়স সর্বোচ্চ ছয় বছর।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত পেরিয়ে যাতে কোনও রোহিঙ্গা ভারতে অনুপ্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।অপরদিকে ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এ পাশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারত থেকে পুশব্যাক হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের একজন আব্দুর রহিম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার হারিদং এলাকায় বাড়ি তার। আব্দুর রহিম বলেন, ‘২০১৪ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা হলে আমরা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে ভারতে চলে যাই। সম্প্রতি মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দেওয়ার খবর শুনে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের বলেছে, ‘তোমরা এদেশী না, তোমরা পরদেশী। তোমাদের এদেশে ঠাঁই হবে না। তোমরা বাংলাদেশে চলে যাও।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে ওখানে (ভারতে) তিন বছর অবস্থান করেছি। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতাম। শুনেছি, আমার বাবা-মা বর্তমানে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।’
রহিম আরও বলেন, ‘১০ অক্টোবর গভীর রাতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এপাড়ে আসার পর বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী আটক করে।’
সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি’র পদ্মশাখরা বিওপি কমান্ডার সুবেদার মোশাররফ হোসেন তাদের বরাত দিয়ে জানান, তারা সবাই ভারত থেকে বিএসএফ-র সহায়তায় বাংলাদেশে এসেছেন। এর আগে ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই দফায় তারা মিয়ানমার থেকে ভারতের দিল্লিতে যান। সেখানে তারা বসবাস করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং খাদ্য বস্ত্র ও চিকিৎসা দিচ্ছে, এই খবর পেয়ে তারা দিল্লি থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছেন । জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ১৩ জন এবং ৩ অক্টোবর কলারোয়ার হিজলদি সীমান্ত থেকে আরও ৭ রোহিঙ্গা সদস্যকে আটক করেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তারাও ভারতীয় পুশব্যাক করা রোহিঙ্গা বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘গত কয়েকদিনে কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত থেকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুনেছি,ওই রোহিঙ্গাদেরও ভারত থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
সাতক্ষীরার ৩৮ বিজিবি’র হিজলদি বিওপির সুবেদার ওমর ফারুক জানান, গত সপ্তাহে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুই শিশুসহ সাত নারী-পুরুষ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছিল।পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছিল।
কাজের সন্ধানে তারা ভারতে যাওয়ার জন্য কলারোয়ায় আসে।আমাদের হাতে আটক হয়।পরে তাদের কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল আরমান হোসেন আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তারা ২০১২ ও ২০১৪ সালে মায়ানমার ছেড়ে ভারতের উত্তর প্রদেশের আশ্রয় গ্রহণ করে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে, এমন খবরে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এব্যাপারে সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন