রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের গভীরতা ভাষায় প্রকাশ যোগ্য নয়

‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের গভীরতা শব্দ দিয়ে ধারণ করা কষ্টসাধ্য।’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক কানাডার বিশেষ দূত বব রয়ের অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়। সেখানে রোহিঙ্গা নারীদের দুর্দশার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন এই রিপোর্ট বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ করা হয়।

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর দেশটির সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন চালানো শুরু করে। এতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ‘শোচনীয়ভাবে’ জনাকীর্ণ এবং তা মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্যও হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।

‘এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সামিল হতে হবে। এক্ষেত্রে আরও সহায়তা প্রয়োজন’, বলেও উল্লেখ করা হয়।

রোহিঙ্গাদের উপর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সরাসরি উল্লেখ করা উচিত এবং এই বিভিষীকা থেকে বেঁচে ফেরাদের সাহায্যার্থে ট্রমা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।

নারী দুর্দশার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি
রয়ের প্রতিবেদনটিতে নারীদের দুর্দশার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। বলা হয়, তিনি নারীদের কাছ থেকে বিস্তারিত ও স্পষ্ট বর্ণনা শুনেছেন। তারা তাদের যৌন হয়রানির কথা জানিয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নিপীড়নের কথা জানিয়েছেন।

রয় বলেন, এই বর্ণনার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে যৌন সন্ত্রাসকে ব্যবহারের কথা। পালিয়ে বাঁচা নারীদের মধ্যে যৌন হয়রানী সংক্রান্ত মানসিক আঘাতের স্পষ্ট সাক্ষর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

নারী নিপীড়ণের ভয়াবহতা বর্ণনায় তিনি বলেন, শব্দগুলো মুদ্রিত দেখে বুঝতে পারি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষতি এবং মানসিক আঘাতে জর্জরিত নারী-বালিকাদের র্দুদশার ব্যপ্তি প্রকাশে শব্দের কত অভাব।

এই সংকট মোকাবেলায় একটি বিশেষ প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে রিপোর্টে বলা হয়।

এই বছরের শুরুতে রোহিঙ্গাদের সংকট বিষয়ক সংবাদ-পরামর্শের জন্য অন্টারিও প্রদেশের সাবেক প্রিমিয়ার (প্রধান) বব রয়কে নিযুক্ত করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এই সংকটকে জাতিগত নিধন বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

এই বছরের শুরুর দিকে পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সফর করেন রয়। তিনি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতা, কর্মকর্তা ও বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথেও দেখা করেন।

জানুয়ারিতে আবারও আসবেন রয়
রোহিঙ্গাদের প্রতি আচরণ পরীক্ষা করে দেখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন নিযুন্ত করেছে। কিন্তু তাদের মিয়ানমার সফর বা দেশটির সরকার ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না, বলেন রয়।

এই বিষয়ক তদন্ত ‘পূঙ্খানুপুঙ্খ ও পদ্ধতিগত’ হওয়া উচিত উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, এক্ষেত্রে অবশ্যই সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। গত কয়েক বছরের ঘটনা প্রবাহ যাচাই করে দেখতে হবে।

আরও বলা হয়, কানাডাকে অবশ্যই এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আন্তর্জাতিক কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ‘ডক্টর্স উইদাউট বরডার্স গত সপ্তাহে বলে, একটি মাঠ জড়িপ চালিয়ে তারা দেখেছে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যকার অভিযানে কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়।

সরকার এবং সামরিক বাহিনী সরকারি কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য অপরাধ বিষয়ে তদন্ত করতে অনিচ্ছুক বলে অভিযুক্ত করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে সোমবার একটি বিবৃতিতে জানায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

রয় বলেন, তার ‘চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্ট’ চালিয়ে যেতে তিনি নতুন বছরে বাংলাদেশে আসতে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন ও প্রস্তাবনাগুলো প্রকাশের আগে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে আরও কথা বলতে চান।