রোহিঙ্গা ইস্যুতে ট্রাম্পের কাছে চাওয়ার কিছু নেই : হাসিনা
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহায্য করবেন বলে আশা করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, শরণার্থী নিয়ে নিজের ভাবনা ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর রয়টার্সকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় গতকাল ট্রাম্পের আয়োজনে জাতিসংঘের সংস্কার বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রয়টার্সের সাংবাদিক মিশেল নিকোলসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা জানান, সভাস্থল ছাড়ার পর ট্রাম্পকে তিনি কয়েক মিনিটের জন্য থামান। এ সময় ট্রাম্প বাংলাদেশের খবর জানতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলি, বাংলাদেশ খুব ভালো অবস্থায় আছে। তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা। কিন্তু ট্রাম্প শরণার্থীদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।’
পুলিশের কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে হামলার পর গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়। সহিংসতা থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি সেখানে ভাষণ দেবেন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, তারা কোনো শরণার্থীকে সে দেশে ঢুকতে দেবে না। আমি তাদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারি, বিশেষ করে সে দেশের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে? তিনি (ট্রাম্প) এর মধ্যেই তাঁর মনোভাব প্রকাশ করেছেন…তাহলে আর কেন সাহায্য চাইব?’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ধনী দেশ নয়…কিন্তু যদি আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, তাহলে আরও ৫০০ অথবা সাত লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারব।’
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থীবিষয়ক কর্মসূচিতে ১২০ দিনের স্থগিতাদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেন। মুসলিম-অধ্যুষিত ছয়টি দেশের মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ৯০ দিন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন। গত শুক্রবার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত, কঠোর ও সুনির্দিষ্ট করা উচিত।’
ট্রাম্প বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি প্রয়োজন। আগামী মাসে ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক নির্বাহী আদেশের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
রয়টার্স বলছে, সাম্প্রতিক সহিংসতা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। তাদের বেশির ভাগেরই চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্বও দেওয়া হয়নি। স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনেকে তাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর তিনি আরও আন্তর্জাতিক চাপ দেখতে চান।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘(মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে) মানতে হবে যে এই মানুষগুলো তাঁর দেশের এবং মিয়ানমারই তাদের দেশ। তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। এই মানুষগুলো দুর্ভোগে রয়েছে।’
নোবেল পুরস্কারজয়ী সু চি মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ না নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা থং তুন গতকাল রয়টার্সকে বলেন, ‘যারা বাড়িঘর ছেড়ে গেছে, তাদের ফিরে আসা মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটি করতে হবে। এ জন্য আমাদের আলোচনা করতে হবে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হেলি সেনা অভিযান বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানান।
স্থানীয় সময় গতকাল রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্যের আয়োজনে নিউইয়র্কে এক সভায় অংশগ্রহণের পর হেলি বলেন, ‘মানুষেরা (রোহিঙ্গা) এখনো হামলা অথবা হত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সাধারণ মানুষ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন