রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকার চিঠিতে সাড়া দিল না ভারত

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হয়েছে আন্তর্জাতিক চাপে। সেই চাপ অব্যাহত রাখা ও দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে বিশেষ সেশন আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে ঢাকার পক্ষ থেকে। সেখানে অনুরোধ করা হয়েছে, রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী মঙ্গলবার(৫ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে বিশেষ সেশন আহ্বানের।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এই সেশন আহ্বানের জন্য অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ দেয়। কাউন্সিলের সদস্য ৪৭ সদস্যের মধ্যে ৩৩টিই এতে সমর্থন দিয়েছে। এছাড়াও সদস্য নয় এমন ৪০টি দেশও এ বিশেষ সেশন আহ্বানের অনুরোধকে সমর্থন করেছে। তবে ভারত ও চীন এতে সমর্থন জানায়নি। এর আগেও একটি ভোটে ঢাকার বিপক্ষে গিয়েছে দিল্লি। অবশ্য, দেশ দুটিকে পক্ষে আনতে বাংলাদেশের তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে।

এই বিশেষ সেশনের নাম হচ্ছে, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, কাউন্সিলের সদস্য ৪৭ দেশের মধ্যে চীনও আছে। আমরা চীনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। চেষ্টা করছি একটি সর্বসম্মত রেজ্যুলেশন গ্রহণের জন্য।

জাতিসংঘের থার্ড কমিটির রেজ্যুলেশনে যেসব বিষয়ের উল্লেখ ছিল তার সবগুলোই মানবাধিকার কাউন্সিলের রেজ্যুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি বিশেষ সেশন ডাকার অনুরোধ করেছি। পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ কাজ করছে। আমরা থার্ড কমিটির রেজ্যুলেশনের বিষয়বস্তুসহ আরও কয়েকটি বিষয় এখানে সংযুক্ত করেছি।

থার্ড কমিটির রেজ্যুলেশনে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, রোহিঙ্গাদের যারা অত্যাচার করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও বলা হয়েছে।

ওই রেজ্যুলেশনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে এবং রাখাইনে যেন জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

থার্ড কমিটির রেজ্যুলেশনের বাইরে আর কী কী উপাদান এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই মানবাধিকার কাউন্সিল এ বিষয়টির সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হোক। এ জন্য আমরা বিশেষ সুপারিশ করেছি।

বাংলাদেশের আহ্বানের পক্ষে ও বিপক্ষে

মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে চীন ও ভারত মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য এবং থার্ড কমিটির ভোটাভুটিতে দেশটি কোনও পক্ষ নেয়নি। মানবাধিকার কাউন্সিলেও দিল্লি সমর্থন দেয়নি বাংলাদেশকে। ভারতের অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। আমরা চাই রেজ্যুলেশনটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হোক। কিন্তু এরপরও যদি কোনও রাষ্ট্র ভোটাভুটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তবুও আমরা আশা করছি এটি বিপুল ভোটে গৃহীত হবে।

গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হলে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরপর থেকেই ওই নিধনযজ্ঞ বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরাতে নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ।