রোহিঙ্গা নারীর কান্না ভেজা চিঠি : অতঃপর হাজারো মানুষের চোখে জল
আমি একজন মায়ানমারের মেয়ে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমতে আরোও ৩ বছর আগেই আমি মুফতিয়া পাশ করে, খুব ছোট্ট একটা সংসার গড়ি, বছর না যেতেই আমাদের কোল জুড়ে এলো সুন্দর ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। হঠাৎই একদিন সেনাবাহিনীর কিছু মানুষ আমাদের গৃহে প্রবেশ করলো। ওদেরকে দেখে আমি বোরকা পড়ে, মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলাম, ওরা এসেই আমার হাত ধরে টানাটানি করতে লাগলো, যার ফলে হাত ফোসকে আমার মেয়ে নিচে পড়ে যায়, ওরা যখন আমাকে ভোগ করার জন্য বোরকাতে হাত লাগালো, তখন সাথে সাথে আমার মাথা ঘুরে গেলো, আল্লাহকে বললাম ইয়া আল্লাহ আমি তোমার সামনে জ্বিনাকারি হয়ে উঠতে চাইনা, তুমি আমাকে ঈমানী শক্তি দান করো।
সাথে সাথে আমার কাছে মনে হলো, আমি যেন আল্লাহর কাছে সাহায্যে চাইতে দেরী করেছি, কিন্তু তিনি আমাকে সাহায্যে করতে দেরী করেন নি। সামনেই তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটা বটি, যেটা অনেক দিন আমরা ব্যবহার করি না, কোন ধার নাই, সেটা হাতে তুলে নিয়ে ৬/৭ জন সেনাকে হত্যা করার পর, এক সেনা ফোন করে আরোও অনেক সেনা আনলেন, এবার চারজন সেনা আমাকে ধরে রেখেছে, আর দুইজন সেনা আমার ছোট্ট শিশুটির কাছে গিয়ে হাতের অস্ত্র দিয়ে, আমার শিশু কন্যাটির লজ্জা স্থানে ঢুকিয়ে দিলো, মেয়েটি চোখের সামনে ছটফট করে মারা গেলো, ইতিমধ্যে আমার স্বামী ঘরে আসলে, কিছু সেনা তাকে পিটাতে লাগলো, আর আমাকে বললো তোর সাথে আমরা সবাই এখন খেলা করবো, আর তোর স্বামী দেখবে, তারপর তোদেরকে হত্যা করবো। আমার স্বামী সন্তান কারোর জন্য মায়া হলো না, তখন আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছিলাম, ওদের কারও কাছে একটু ও মাথা নত করিনি।
হঠাৎই নজর গেলো একবস্তা ছাইয়ের উপর, জানিনা সেটা ওখানে কি করে এলো, এবার দৌড়ে গিয়ে ছাইয়ের বস্তার মুখ খুলে ছাই উড়াতে লাগলাম, আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ আমাকে তার রহমত দ্বারা ঘিরে নিলেন, প্রতিটি সেনা চোখ বন্ধ করে, আমাকে গালাগালি করছিল, আমি কোন মতো একটু আড়ালে চলে গেলাম, ওরা এবার চোখ কচলাতে কচলাতে আমার স্বামীর কাছে গিয়ে, তাকে জবাই করলো, আর বলতে লাগলো, যার বৌয়ের এতো শক্তি তার কলিজাটা দেখবো।
ওরা সত্যি সত্যি আমার স্বামীর কলিজাটা ছিড়ে, মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ কামড়িয়ে খেতে লাগলো, আমি আর সহ্য করতে না পেরে, জ্ঞান হারিয়ে ফেলি, ঠিক কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছিলো আমি জানিনা, উঠে গিয়ে ওযু করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য নামাজ পড়লাম। ছোট্ট একটা কাপড় দিয়ে স্বামী আর সন্তানের লাশ ঢেকে রেখে অজানার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। একটানা ৭ দিন পানি খেয়ে থাকার পর, যখন আর ক্ষুধার জ্বালা সইতে পারলাম না, তখন যেকোন সবুজ পাতা ঘাস খাওয়া শুরু করলাম…।
একটা ঝোপের ভিতরে লুকিয়ে যোহরের নামাজ পড়ছিলাম, যখন নামাজ পড়া শেষ হলো, তখন দেখি সেনারা আমাকে গুলি করেছে, বাহু দিয়ে গড়গড় করে রক্ত পড়ছে, কেন জানি আমার কোন ব্যথায় লাগছিলো না, মনে পড়ে গেলো সাহাবা আজমাইনদের কথা, তারা যখন নামাজ পড়তো, কাফেররা তখন পিছন দিক দিয়ে আক্রমণ করতো। এমন সাহাবাও আছে, যাদেরকে কাফেররা নামাজের মধ্যেই তীর মেরে মেরে শহীদ করেছেন, তাহলে আমরা কেন এই শহীদি মরন কে বরন করতে পারবোনা।
এইসব ভাবতে ভাবতেই সেনারা অনেক কাছে চলে এলো, তখন আল্লাহকে স্বরন করতে করতে দৌড় দিলাম, তিনি আমাকে পানিতে নিয়ে ফেললেন, এবং ভাসিয়ে রাখলেন কতদিন তা আমি জানি না, যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি অপরিচিত কিছু মানুষ আমাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।
শরীলের সমস্ত জায়গায় বোরকাটা ঠিকমতো আছে, শুধু পায়ের একটা মোজা কোথায় জানি হারিয়ে গেছে, আমি লজ্জিত হলাম, কারন এতগুলো পুরুষ আমার পায়ের রং দেখেছে, না জানি আল্লাহ আমাকে কি কঠিন শাস্তি দেন, তওবা করলাম, আর দৌড়ে গিয়ে ওযু করে সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম।
পরে জানতে পারলাম আমি পানিতে ভাসতে ছিলাম, তখন লাশ মনে করে এক জেলে কিনারে উঠিয়েছে। আমি তাদের কাছে কিছু খাবার চাইছিলাম, কিন্তু তখন আমি খুব অবাক হলাম কেউ আমাকে একটু খাবার ও দিলোনা। বরং এক এক করে সবাই চলে গেলো। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম, কিছুদূর গিয়ে একজন হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কি কোন আশ্রয় কেন্দ্র আছে।
উনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে, আমাকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে দিয়ে আসলো। কি আজব ব্যপার এখানে তো অনেক কষ্ট, পেট ভরে পানি খাব, তাও পারিনা, আর খাবার এতটুকু যে, পেটের নিচে পড়ে থাকে, তবুও আমরা খুশি আলহামদুলিল্লাহ্। এরপর কয়েকদিন পর পুলিশের গাড়িতে একজন ভদ্র মহিলা এলো, যিনি আমাদের মেয়েদের তল্লাশি করলেন, এরপর আমাদের কিছু মেয়েদের আলাদা করলেন। বলতে পারেন, যারা দেখতে অনেক সুন্দরী।
এরপর আমাদের জন্য কিছু ত্রাণ নিয়ে এসেছিল, কিছু যুবক ছেলেরা, কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যানরা তাদের থেকে ত্রাণ নিয়ে, তাদেরকে পাঠিয়ে দিলো, আর আমাদের অল্প কিছু দিয়ে, উনারা সব নিয়ে চলে গেলেন, কেউ কেউ একটু বেশি চাওয়ার কারনে পিটুনি খেলো, এমনকি কিছু কিছু খারাপ ছেলেরা মেয়েদের বুকে লজ্জা স্থানে হাত চালিয়ে দিলো, ফলে আমরা সবাই চুপসে গেলাম, যদি আমরা প্রতিবাদ করি, তবে তো এইটুকুও আমাদের কপালে জুটবেনা। কেউ কেউ বলছিল, তাদের টাকা আর গয়না ও নাকি বাংলাদেশীও শকুন গুলো ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি স্তব্ধ হয়ে, মন্ত্র মুগ্ধের মতো সব শুনছিলাম।
এরপর হঠাৎই একদল বয়স্ক মেয়ে এসে আমাদের কিছু কিছু মেয়েদের নিয়ে চলে গেল একটা হোটেলে, তারপর কি অবাক করা কাহিনীই ঘটলো, বিনা ভিসা, বিনা পাসপোর্টে আমাদেরকে গাড়িতে তুলে দিলো, এবং কোথায় যে নিয়ে গিয়ে নামালো, তা আমি জানিনা, আমাদের প্রত্যেককে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ছিলো।
যার ফলে আমরা অচেতন ছিলাম। যখন আমরা জ্ঞান ফিরে পাই, তখন নিজেদের আবিষ্কার করলাম, কোন একটা পতিতালয়ে। আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিলো, আল্লাহ বুঝি আমাদের উপর কঠিন পরীক্ষা চালাচ্ছেন, এইজন্যেই বুঝি বাংলাদেশী মুনাফেকীরা আমাদের এই অবস্থা করেছে।
আল্লাহর কাছে তওবা করলাম, আর আমাকে হেফাজতের পুরো দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম, যিনি এত কিছুর পরও আমাকে পবিত্র রেখেছেন, তিন নিশ্চয়ই আমাকে হতাশ করবেন না। মালয়েশিয়ার এক নাগরিক এলেন, আমার সাথে রাত্রি যাপন করার জন্য। তিনি আমার নাম আর কোথায় বাড়ি সেটা শুনছিলেন, আমি তাকে সব কিছুই বলে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎই খেয়াল করে দেখি, উনি শীতে তীব্র আকারে কাঁপছেন, প্রশ্ন করলাম এই প্রচন্ড গরমে, শীতের মতো কাঁপছেন কেন? উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার পিছু হেটে আসুন, আল্লাহর কছম আপনার কোন ক্ষতি হবেনা। আমি তার পিছু হেটে চললাম অনেক দূর পর্যন্ত, উনি
এবার রাস্তার মধ্যেই আমার পায়ে ধরে বললেন, আমি ভাল হতে চাই, আমাকে একটা সুযোগ দাও, আমি আর আল্লাহর নাফরমানি করবোনা, তোমার সমস্ত দায়িত্ব আমার, তুমি রাজি হলে, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি। আমি রাজি হলাম, তিনি আমাকে নগদ দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করলেন। রোজ সে আমার কাছে আরবি, আর হাদীসের কিতাব পড়ে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে হেফাজত করেছেন…।
কিন্তু আমার মতো তো আর ওরা ওইখান থেকে ফিরতে পারলোনা, ওদের জন্য দুঃখ হয়, আর পৃথিবীর বুকে যদি কোন কাপুরুষ রাষ্ট্র থাকে, তবে সেটা হলো বাংলাদেশ। যারা অসহায়দের সম্পদ লুটপাট করতে, আর নারীদের উপর নির্যাতন করতে দ্বীধাবোধ করে না।
ছি বাঙ্গালী জাতি তোমাদের ঘৃণা হওয়া উচিত, কারণ তোমরা কৃতজ্ঞতাও স্বিকার করতে জানো না। তোমাদের দেশে যখন যুদ্ধ হয়েছিল, তখন আমরা তোমাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম, আর শুধু তাই নয়, তোমাদের উপর চুল পরিমাণ যুলুম কেউ করার সাহস পায়নি। আর কত তামাশা দেখবে, তোমরা আমাদের প্রতিবেশী হয়েও কেন চুপ, বুঝেছি তোমাদের মা, বোন তো আমরা নয়, হে বাংলার যুবক তোমরাও প্রস্তুতি নাও, তোমার মা, স্ত্রী, কন্যাদের কাঁধ শক্ত করতে বলো, কারন অচিরেই তোমরা এমন নির্যাতিত হবে। পারবে কি তখন যুদ্ধে না গিয়ে, নারীদের ইজ্জত রক্ষা না করে, ঘরের কোনে বসে থাকতে। ফেসবুক থেকে……
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন