রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাহানা করছে মিয়ানমার : রয়টার্সকে শেখ হাসিনা
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে প্রতিবেশী মিয়ানমার নতুন বাহানা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে নিউইয়র্কে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ অভিযোগ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর নীতি থেকে সরে আসবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেশে এমনিতেই এখন ১৬ কোটি মানুষ। আমি আর কোনো বোঝা নিতে পারব না। রোহিঙ্গাদের নিতে পারব না। কেননা আমার দেশ এটা সহ্য করতে পারবে না।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাওয়া শেখ হাসিনা বলছেন, শরণার্থী ইস্যুতে তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চান না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শান্তিতে নোবেল জয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে “মূল ক্ষমতা” থাকলেও তাদের কথায় ধৈর্য ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছেন তিনি।
এর আগে, শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যে চুক্তি হয়েছিল তার বাস্তবায়নে বিশ্ব-সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য হতেকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, টেলিফোনে তিনি কোনো গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। তিনি প্রতি সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। গত বছরের নভেম্বরে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হয়, আগামী দুই মাসের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করবে; কিন্তু সেটা এখনও শুরু হয়নি। এখনও রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের বিষয়ে বলেন, তারা সব বিষয়ে রাজি হচ্ছে; কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করছে না। এটাই হলো সমস্যা। সবকিছুই ঠিকঠাক থাকে কিন্তু সব সময় তারা কোনো না কোনো অজুহাত হাজির করেন।
মিয়ানমার বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে প্রস্তুত। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে রাখাইনে ট্রানজিট কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
কিন্তু মিয়ানমারের অভিযোগ, তাদেরকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যথাযথ উপায় সম্পর্কে কিছুই জানাচ্ছে না। বাংলাদেশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এদিকে, জাতিসংঘের দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, এখনই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য রাখাইন এখনও নিরাপদ নয়।
অন্যদিকে, প্রত্যাবাসন বিলম্বের কারণে বাংলাদেশ সরকার দূরবর্তী ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সেখানে রোহিঙ্গারা বন্যার কবলে পড়বে। তাছাড়া কক্সবাজারও বন্যা পরিস্থিতির জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা; কিন্তু চলতি বছর ভারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সেখানে ঝুঁকি কিছুটা কম ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ীভাবে কোনো আবাসস্থল তৈরি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এটা দেশের মানুষ মেনেও নেবে না। তারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী বলে দাবি করে; কিন্তু দেশটির কট্টরপন্থী উগ্র বৌদ্ধরা তাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে মনে করে। কয়েক প্রজন্ম ধরে দেশটিতে বসবাস করে এলেও মিয়ানমার সরকার এই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টদের ধারণা, গত বছরের আগস্টে রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং অন্যান্য নির্যাতন চালায়।
তবে মিয়ানমার এই প্রতিবেদনকে একপাক্ষিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি বলছে, বিদ্রোহীদের দমনে আইনসম্মত অভিযান পরিচালনা করেছে তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন