‘রোহিঙ্গা’ বলে তোপের মুখে পোপ ফ্রান্সিস
বাংলাদেশ সফরে এসে রাখাইনে নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় ‘রোহিঙ্গা’দের নাম উচ্চারণ করায় মিয়ানমারের নাগরিকদের তোপের মুখে পড়েছেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।
তিনদিনের মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটিতে রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে না আনলেও বাংলাদেশে এসে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের এ ধর্মগুরু ঢাকায় বলেন, আজ ঈশ্বরের উপস্থিতি বিরাজ করছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করায় মিয়ানমারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
এ সময় তিনি তাদের ‘রোহিঙ্গা’ বলে উল্লেখ করেন; মিয়ানমারের অনেকেই রাখাইনের এ সংখ্যালঘু মুসলিমদের রোহিঙ্গা বলে ডাকেন না। জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পাড়ি জমানো অবৈধ বাঙালি অভিবাসী বলে দাবি করে দেশটির অধিকাংশ মানুষ।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সফরে দেশটির ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের এক উন্মুক্ত সমাবেশে রোহিঙ্গা শব্দটি এমনকি রাখাইন সঙ্কটের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। গত আগস্টের পর রাখাইন থেকে প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।
ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে না আনায় প্রাথমিকভাবে পোপের এ সতর্কতা মিয়ানমারের সংখ্যালঘু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি কট্টরপন্থী বৌদ্ধদেরও মন জয় করেছিল। বৌদ্ধদের কট্টর মনোভাবের কারণে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে পোপকে আগেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল।
আগস্টের শেষের দিকে রাখাইনের নিরাপত্তা চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযান শুরু হয়। রোহিঙ্গাবিরোধী এ অভিযানকে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ জাতিগত নিধন অভিযান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
রোববার ভ্যাটিকানে পৌঁছানোর পর পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কেঁদেছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
‘আমি কেঁদেছি; এমনভাবে কেঁদেছি যাতে এটি দেখা না যায়। তারাও কেঁদেছে।’
পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মিয়ানমারে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সক্রিয়। এতে অনেকেই পোপের রোহিঙ্গা শব্দ মুখে আনার ব্যাপারে তোপ ঝেড়েছেন। এ সঙ্কটে পোপ দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছেন উল্লেখ করে অং সো লিন সামের একজন লিখেছেন, ‘তিনি টিকটিকির মতো; আবহাওয়ার কারণে যার রঙ পরিবর্তন হয়।’
সোয়ে সোয়ে নামের একজন লিখেছেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করায় ধর্মীয় নেতা হওয়ার চেয়ে তার বিক্রয়কর্মী অথবা দালাল হওয়া উচিত ছিল।’
ইয়ে লিন মং নামের অপর একজন লিখেছেন, পোপ হচ্ছেন পবিত্র ব্যক্তি…কিন্তু তিনি এখানে (মিয়ানমারে এক ধরনের কথা বলেছেন এবং অন্য দেশে গিয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি যদি সত্যকে ভালোবাসেন তাহলে একই ধরনের কথা বলা উচিত ছিল তার।
সূত্র : এএফপি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন