র্যাম্প মডেল থেকে ‘জেএমবির কমান্ডার’
র্যাম্প মডেল হওয়া ইচ্ছা ছিল ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশও নেন তিনি। তবে ২০১৫ সালে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে পাল্টে যায় তার জীবন। র্যাব মডেল থেকে হয়ে ওঠেন জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনি’র কমান্ডার।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ানবাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ এসব তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। এ সময় তার কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্টসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ বলেন, ২০১৫ সালে র্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয় জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে র্যাব জেএমবির আলাদা ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ ও ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ নামে আরও দুটি ব্রিগেডের তথ্য পায়।
গুলশানের হলি আর্টিসানসহ অন্যান্য হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হলে দুর্বল হয়ে পড়ে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ এর ব্যাকআপ বা রিজার্ভ হিসেবে সক্রিয় হতে শুরু করে ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’।
সম্প্রতি বেশ কয়েকজন উগ্র ও জঙ্গি সদস্য গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা জানতে পারেন এই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’-এর নের্তৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতে গতরাতে (বুধবার) রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তার (আবু জিব্রিল) বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল রাজাপুরে। বাবার নাম খোরশেদ আলম। জেএমবিতে যোগদানের পূর্বে র্যাব মডেলিং করত মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। রাজধানীর সোনারগাঁও রেডিসনের মত অভিযাতও হোটেলগুলোতে র্যাব মডেলিং করতেন তিনি।
জেএমবিতে যোগদানের পর তার কাজ ছিল কর্মী সংগ্রহ করা ও ‘হিজরতে’ সহযোগিতা করা। সুন্দর চেহারা ও মোটিভেশন ক্ষমতার কারণে দ্রুত ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ কমান্ডারের পদ পান আবু জিব্রিল।
লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনি’-এর কমান্ডার ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি আইটি এক্সপার্ট হিসেবে ঊর্ধ্বতন জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কাজগুলো অনলাইনে পরিচালনা করতেন। তার বাসা থেকে এ রকম যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে গুলশান হলি আর্টিসান ও কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানার জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে আবু জিব্রিল র্যাবকে জানায়, তিনি রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় বেশ কয়েকজন জেএমবিতে যোগ দেয়া নতুন কর্মীদের বাইয়্যাত (শপথ) পাঠ করিয়েছেন তিনি। জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনি’তে আনসার (সাহায্যকারী). মুজাহির (যোদ্ধা), সালাফি আলেম বোর্ড এবং অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে বলে জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বদর ব্রিগেড দুর্বল হওয়ার পর মূলতঃ আবু জিব্রিলের নের্তৃত্বেই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনি’ বিভিন্ন অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন ও যেকোনো স্থানে নাশকতা করার মতো পরিকল্পনা নেয় জেএমবি। আবু জিব্রিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন