লক্ষ্য ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন, মোদি বিরোধী মহাজোটে নতুন মুখ কে?
এ বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন শেষ হলো। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সালে। সে হিসাবে এখনও বাকি তিন বছর। তবে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের রাজনীতিতে এই দুটো সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব রাজনৈতিক দলের কাছে ২০২৪ এখন বড়সড় টার্গেট।
২০২৪ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচন। যাকে লোকসভা নির্বাচন বলে। ওই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে না নতুন কোনো রাজনৈতিক শক্তি ১৩০ কোটি মানুষের দেশে শাসন ভার নেবে- সেটা নির্ধারণ হয়ে যাবে।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় ফিরেছেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ৩ থেকে ৭৭ জন বিধায়ক বাড়াতে পেরেছে। কংগ্রেস-বাম জোট প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ভোটের মধ্যদিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাইরে কংগ্রেস-বাম ফ্রন্টের রাজনৈতিক শক্তি দিনকে দিন কমছে।
সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে শেষ লোকসভা ভোটে মোদির দল বিজেপি যে গণজোয়ার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যের স্থানীয় ইস্যু যেমন করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, টিকা সংকট এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ২০১৯ সালের মতো মোদির দলের তেমন শক্তপোক্ত জনভিত্তি নেই বলে দাবি উঠছে।
আর সেই সুযোগ নিতে মরিয়া হয়েছে বিজেপি বিরোধী শিবির। কংগ্রেস, বাম এবং অবশ্যই এ শিবিরের অন্যতম শক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসকেও। বিশেষ করে, সবশেষ বিধানসভা ভোটে যেভাবে ২১৩ আসনের বিধানসভায় নিজেদের জয়জয়কার ধরে রেখেছেন মমতা, বিধানসভা ভোট প্রক্রিয়ায় মোদি-অমিত শাহদের লাগাতার রাজ্য সফরে মমতাকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণের পরও যে মানুষের রায় তৃণমূলের পক্ষে গেছে; সেটাকেই এখন কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে। তাই নতুন একটি মহাজোটের ইঙ্গিত মিলছে কদিন ধরে।
ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে মমতার দলের তেমন প্রভাব না থাকলেও জাতীয় স্তরের মমতার পরিচিত মোদির চেয়ে নেহায়েত কম নয়। ভারতের প্রাদেশিক দলগুলোর নেতৃত্বের মধ্যে মায়াবতি, শরদ পাওয়ার, নীতিশ কুমার, উদ্ভভ ঠাকরে, স্টেলিন, অখিলেশ যাদব কিংবা অরবিন্দ কাজরিওয়ালদের চেয়েও মমতার পরিচিতি অনেক বেশি বলেই সর্বভারতীয় গণমাধ্যম গুলোয় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়।
তবে রাজনৈতিক প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া কোনও রাজ্যে নেই বলা ভালো প্রায় শূন্য। আসাম ও ত্রিপুরায় চেষ্টা করেও তৃণমূল রাজনৈতিক জমি পায়নি। তবে মোদি-অমিত শাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় আক্রমণ কেবল মমতার মুখ থেকেই শোনা যায়।
এমন কি জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর মুখেও খুব বেশি মোদিবিরোধী সুর তুলদে দেখা যায় না। তবে যেহেতু বিজেপির পরই জাতীয়স্তরের কংগ্রেসই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, তাই স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসকেই মনে করা হয় বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক মুখ।
লোকসভা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোট ২০২২ সালে, ২০২৩ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশ এবং ত্রিপুরা দুটোতেই বিজেপি ক্ষমতায়। আর লোকসভা ভোটের উত্তরপ্রদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি সংসদ সদস্য নির্বাচন হয়েছিল বিজেপির। বলা হয়, উত্তরপ্রদেশ যার ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনভর তার হাতে। ফলে আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগেই বিরোধীরা একাট্টা হতে চাইছে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মোদি বিরোধী মহাজোটের তৈরির রূপরেখা ঠিক করতে সোমবার রাতেই দিল্লি যাচ্ছন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর দুদিন আগে থেকেই দিল্লিতে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখপাত্র ডেরেক ও ‘ব্রায়ন। আগামী বৃহস্পতিবার কংগ্রেসসহ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্র দাবি করছে, ভারতের মোদি বিরোধী মুখ হিসাবে মমতার গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বাড়ছে। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের পাশে থাকলে ২০২৪ সালে লোকসভায় মোদিকে ধাক্কা দিতে পারবেন মমতাই। তাই মমতাকে এখন থেকেই দিল্লির রাজনৈতিক মহলে প্রভাব তৈরি করতে হবে। তাই এখন থেকে প্রায় ঘন ঘন দিল্লি সফর করবেন মমতা। কারণ তৃণমূলের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন তাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও মমতার এ দিল্লি সফরকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ রাজনৈতিক অঙ্ক মেলাতে গেলে মমতার দলকে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে সব আসনে লোকসভা জিততে হবে। শুধু তাই নয়, অন্য রাজ্যে মমতার দলের সাংসদ থাকতে হবে। সব মিলিয়ে মমতার দলকে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে জয় লাভ করলেই জাতীয় স্তরের মমতার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। অন্যথায় শুধু নিজেদের পক্ষ থেকে দাবি করলেই হবে না। রাজনৈতিক অঙ্কটাও বুঝতে হবে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইবেন। এর বাইরে জোটের সম্ভাবনাকেও তিনি কটাক্ষ করে বলেন, আগে ওরা মুখ ঠিক করুন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। মহাজোট নয়, ওটা আসলে মহাজট হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক লোকসভা ভোটের আগেই এ ধরনের কিছু ছোট রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু অতীত থেকেই তো আমরা দেখেছি, আসলে এ জোট ভোটের ফল প্রকাশের আগে আসন ভাগাভাগির অঙ্কের জটে পরিণত হয়।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতের রাজনীতিতে কোভিড ছাড়াও মহাজোট ইস্যুতেও নতুন করে উত্তেজনা ছড়াবে রোজ। ২০২৪ সালে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? সেই তর্ক চলবে গণমাধ্যমে। তবে উত্তরপ্রদেশ এবং ত্রিপুরার ভোটের অঙ্ক কিন্তু আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ফলে বড়সড় প্রভাব ফেলতেই পারে। সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন