লাফিয়ে পড়ার আগে ভাইকে ফোন দিয়ে ক্ষমা চান মামুন

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনে নিহতদের একজন হলেন দিনাজপুরের আবদুল্লাহ আল মামুন (৪৭)। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর আটতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

মামুন এফ আর টাওয়ারে থাকা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ গ্রুপের অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। আগুনের ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের আরো তিনজন মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে উপস্থিত হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উনারা আসলে গ্লাস ভেঙে তার বেয়ে নামার চেষ্টা করেছিলেন। উপর থেকে যখন একজন তারটা ছেড়ে দেন, পরে নিচের জনের ওপর পড়লে তারা দুইজনই নিচে পড়ে যান এবং সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। আরেকজনও একইভাবে লাফিয়ে পড়ে মারা যান।’

ওই তিনজনের মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। মিজান নামের অপর একজন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন।

ঘটনার পর জাহিদুল আলম পাটোয়ারী নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘Abdullah Al Mamun আমার বড় ভাই। বনানী আগুন লাগার পর ৮ তলা থেকে লাফ দেওয়ার পর আর জীবিত রইলো না। গতকাল একসাথে চা খেলাম। প্রতিদিন একসাথে আড্ডা দেই। অনেক ভালো মানুষ ছিল। ছোট দুইটা মেয়ে আছে ভাইয়ার। খুব খারাপ লাগছে খবরটা শোনার পর।’

নিহত আবদুল্লাহ দিনাজপুর শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা অন্ধ হাফেজ মোড় নিবাসী প্রাক্তন ফরেস্ট অফিসার মরহুম আবুল কাশেমের দ্বিতীয় ছেলে।

মামুনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর দিনাজপুরের বাসায় চলছে শোক। তাঁর ভাই মোশাররফ হোসেন জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা পাথর হয়ে গেছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি (মামুন) ফোন দিয়ে ক্ষমা চান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, মামুন তার বেয়ে নামার সময় নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি মারা যান।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মামুন দিনাজপুর শহরে স্কুলজীবন সম্পন্ন করে ভারতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন অফিসে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা, মা, চার ভাই-বোন, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রথম জানাজা কাল শুক্রবার বেলা ১১টায় দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ সংলগ্ন মিরাবনে নিজ গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজা দক্ষিণ বালুয়াডাঙ্গা মিনার জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠে বাদ জুমা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে দিনাজপুর শহরের ফরিদপুর কবরস্থানে বাবার পাশে সমাহিত করার কথা পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। বনানীর ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া অন্তত ৩০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড ও অ্যাপোলোসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।