লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে ক্লান্ত ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মেহের আলী

সরকারি খাস জমিতে একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘরেই বাস পরিবারটির। নিজের নেই কোন জমিজমা। জীবন যুদ্ধে বেঁচে আছেন সংগ্রামী মেহের আলী। কিন্তু শেষ বয়সে এসে সংসারের ঘানি টানতে বড়ই ক্লান্ত তিনি।
বিডিআর গেট থেকে হাতীবান্ধা বাইপাস সড়কের পাশে সেই ভাঙাচোরা বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী।
পরিবারের সন্তান বলতে একমাত্র কন্যা, তিনি বিবাহিত ও ব্যস্ত নিজের সংসারে। কোনো ভাতা কার্ড নেই, নেই সরকারি কোনো সহায়তা। অথচ এই বয়সে তাঁর একমাত্র সঙ্গী, স্ত্রী আলেয়া বেগম, নিজেও একজন প্রতিবন্ধী নারী। তিনিও পান না কোনো প্রতিবন্ধী ভাতা বা সরকার ঘোষিত সেবা।
অসহায় এই মানুষটি মোহর আলী। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবি গ্রামের ৭৫ বছরের এক জীবন্ত প্রতিকৃতি, যিনি দারিদ্র্য ও অক্ষমতার মাঝেও লড়ছেন সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার এক কঠিন লড়াই।
মোহর আলী নিজেও অসুস্থ। বয়সের ভারে ক্লান্ত শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। কিন্তু তবু থেমে নেই তিনি। কারণ থেমে যাওয়া মানেই অনাহার, মানেই অসহায় স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আরেকটি দিন না পার করার আতঙ্ক।
এই অবস্থায় মোহর আলীর একমাত্র আশ্রয়—একটি ছোট্ট ভ্রাম্যমাণ পান-সিগারেটের দোকান। প্রতিদিন সকালেই কাঁধে দোকানটি নিয়ে ছুটে যান বড়খাতা হাটে। ছোট ব্যবসার আয় দিয়েই কোনোরকমে চলে চিকিৎসা, খাবার আর সামান্য প্রয়োজন মেটানো। কারও দয়া-অনুগ্রহে যদি এক-দুটা অতিরিক্ত বিক্রি হয়, সেটাই তাঁর জন্য বড় প্রাপ্তি।
মোহর আলী বলছিলেন, “স্ত্রী অসুস্থ, আমি নিজেও ভালো নেই। তবুও দোকান নিয়ে হাটে যাই। কেউ কিছু দিলে ভালো, না দিলে যা পাই তাই দিয়েই চালাই। একটা ভাতা কার্ড থাকলে হয়তো একটু স্বস্তি পেতাম।‘
তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী আলেয়া বেগম বলছিলেন, ‘নিজের বলার মতো কোন ঠিকানা নাই বাবা। জীবনের শেষ সময়ে এসে যদি একটু মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই হতো, তাহলে সন্তান ও আত্মীয়দের বলার মতো একটা ঠিকানা হতো।‘
স্থানীয় বাসিন্দা রশিদা বেগম বলেন, “এমন অসহায় মানুষদের পাশে সরকারের দাঁড়ানো উচিত। অন্তত একটা বয়স্ক ভাতা কিংবা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তার কষ্ট কিছুটা কমানো যেতে পারে।”
একই কথা জানালেন বড়খাতা এলাকার আরেকজন বাসিন্দা আশরাফ আলী। তিনি বলেন, “বহু বছর ধরে মোহর আলীকে এভাবে সংগ্রাম করে বাঁচতে দেখছি। সমাজের ও সরকারের উচিত এমন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।”
বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, “মোহর আলী একজন প্রকৃত দুঃস্থ। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা ও চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করব।”
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিম মিত্রা বলেন, “এমন অসহায় মানুষের খোঁজ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিই। মোহর আলীর বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখব এবং দ্রুতই প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করব।”

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন