লালমনিরহাটে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত!

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারীর চরে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে সংরক্ষতি এলাকা হিসেবে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। যে কারনে দূর থেকে দেখে মনে হবে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে কেউ হয়তো অন্য দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করছেন! কিন্তু বাস্তবে তা ভিন্ন। কারণ যাঁরা ঝুকিঁ নিয়ে ওই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করছেন তাঁরা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা যে রাস্তাটি দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করছিলেন, সেটি এখন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড কাঁটাতারে ঘিরে ফেলেছে। ফলে শুধু শিক্ষকরাই নন, ক্ষুদে শিক্ষার্থীসহ শৌলমারী চরের মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এনিয়ে তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না।

সরজমিনে দেখা যায়, গ্রাম থেকে বেরিয়ে শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছন দিয়ে পূর্ব দিকে চলে গেছে একটি কাঁচা রাস্তা। চরের মাঝ বরাবর রাস্তাটি ঠেকেছে নদীর ঘাট পর্যন্ত। এই রাস্তা দিয়েই মূলত চরবাসীর যোগাযোগ উপজেলার মূল ভুখন্ডের সাথে। সরকারিভাবে প্রতিবছরই রাস্তাটি মেরামত করা হয় বলেও জানান স্থানীয়রা। সেই রাস্তাটিও সৌরবিদ্যুৎ কেন্ত্র স্থাপনের নামে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’ এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাঁটাতারে ঘিরে দখলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে যেসব লোকজন বাপ-দাদার আমল থেকে ওই রাস্তা দিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াত করছিলেন তাদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। এতে করে চরের শিক্ষার্থীরাদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।

জানা যায়, শৌলমারী চরে শিক্ষার আলো জ¦ালানোর দায়িত্বে যেসব শিক্ষক রয়েছেন তাদের প্রায় সবার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশে। প্রতিদিন স্কুলে যেতে প্রথমে নৌকা যোগে পরে দীর্ঘ পথ হেটেঁ শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হয় তাদের। কিন্তু নদীর ঘাট থেকে যে রাস্তাটা সরাসরি গিয়ে স্কুলে ঠেকেছে, সেটি যে কাঁটাতারে ঘিরে ফিলবে বেসরকারি কোন কোম্পানি তা হয়তো জানা ছিলনা তাদের। তাই বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে অনেকটা ঝুকিঁ নিয়ে স্কুল যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।

তাদেরই একজন শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইতি মনি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাওয়া আসা করছি। এখন সেই রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে বেশ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। একজন নারী শিক্ষক হয়ে ওই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো মুশকিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ওই স্কুলের আর এক সহকারি শিক্ষক সানিউর রহমান সানি জানান, ‘ওই রাস্তাটি দিয়ে শুধু আমরা না স্কুলের শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরাও যাতায়াত করেন। বর্তমানে সেটি কাঁটাতারে ঘেরা থাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরতে হয়। সেকারণে বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করছি”।

চারবাসীদের,ভাষ্য মতে, বন্ধ থাকা ওই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মণ ফসল বিভিন্ন হাটে বাজারে যেত। আবার এলাকাবাসী চিকিৎসা, কেনাকাটার জন্যও ওই রাস্তা ব্যবহার করতো বাপ-দাদার আমল থেকে। কিন্তু সেই রাস্তা কাঁটাতারে ঘিরে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

স্থানীয় বাসীন্দা বাচ্চু মিয়া ও লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের রাস্তা বন্ধ করায় চলাচলের কোনো পথ নেই। সেকারণে আমরা লিখিতভাবে ঘটনাটি বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি’।

ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী কাঁটাতারে রাস্তা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই রাস্তাটি সরকারি বরাদ্দে আমি নিজেও কয়েকবার মেরামত করেছি। এখন সেটি বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষজন খুবেই সমস্যায় পড়েছে।

এনিয়ে অভিযোগ জানিয়েও প্রশাসন কিছুই করছেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে ওই সোলার কোম্পানির কালীগঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা উত্তম রায় দাবি করে বলেন, ‘আমরা পাশ দিয়ে আর একটা রাস্তা করে দিয়েছে”।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি তো একটি ট্রেনিং-এ আছি। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।