লালমনিরহাটে তামাকের চাষ কমছেই না

লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা যায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তামাক খেত।লোকজন তামাক খেতে কাজ করছেন।কোনভাবেই যেন তামাকের চাষ কমছেনা। তামাক চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তামাক চাষে উৎপাদন খরচ কম হয়, দামও ভাল পাওয়া যায়।

তাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তারা তামাক চাষ বন্ধ করছেনা। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক তামাকের চাষ ছাড়ছেনা। তাদের ধারনা বোরো ধানে খরচ নাকি বেশি হয়।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, তারা কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বুঝাছেন এবং তামাকের পরিবর্তে ভূট্টা চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে তামাক চাষ কিছুটা কমেছে।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টিপের বাজার এলাকার শামসুল হক বলেন, তিনি এবারে ৩ একর জমিতে তামাকের চাষ করেছেন। বর্তমানে ধান ও সবজি চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। তামাক চাষে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তারপরেও তারা তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।ওই গ্রামের মিন্টু মিয়া বলেন, তামাক চাষে সার, কীটনাশক ও সেচ কম লাগায় উৎপাদন খরচ কম হয়। দাম ভাল পাওয়া যায়। তাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তারা এর চাষ বন্ধ করছেনা।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া গ্রামের হাছেন আলী বলেন, তিনি দীর্ষদিন ধরে তামাক চাষ করছেন। পরিবারের সকলে মিলে তামাক খেতে কাজ করা যায়। সার কম লাগে, নামেমাত্র সেচ লাগে। তামাকের বিষপাতা, গোড়পাতা, মুড়া সব বিক্রি হয়। বিঘাপ্রতি ৩ হতে ৪ হাজার টাকা খরচ করে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। ওই গ্রামের রমেশ চন্দ্র বলেন, আমাদের বাপ দাদারা তামাক চাষ করতেন।আমরা ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবাই মিলে তামাক খেতে কাজ করতাম।

এছাড়াও অনেক তামাক চাষী জানান, এবছরে তামাকের দাম বাড়বে তামাক কোম্পানির লোকজনের এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে এবার অনেকে পুনরায় তামাক চাষে আগ্রহী হয়েছে। অথচ তাদের অনেকের পরিকল্পনা ছিল তামাক চাষ কমানোর।তবে তামাকের দাম বাড়বে শুনে সিদ্ধান্ত বদলাছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, এ বছর তামাকের দাম বাড়বে এমন তথ্য কোন কৃষককে দেয়া হয়নি।এটা একটা গুজব এবং এটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে গেছে।লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে তামাক চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল।তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, বাস্তবে কৃষি বিভাগের তথ্যের দ্বিগুণ বেশি।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আল আকসা বলেন, শুকনো ও সবুজ সব তামাকই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।যারা তামাক চাষ করেন এবং প্রক্রিয়াজাতকরনের সঙ্গে জড়িত তারা ধুমপায়ীদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হন। তামাক ভাঙ্গার সময় তামাকের গুড়া বাতাসের সঙ্গে মানুষের স্বাসনালি দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। নানা রকম ক্যানসার হতে পারে।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক এমনকি সুদমুক্ত ঋন সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে তামাক কোম্পানিগুলো। এ বছর তামাকের দাম বাড়বে এমন গুজব কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তামাক কোম্পানির লোকজন মাঠ পর্যায়ে কাজ না করলে কৃষকদের তামাক চাষ থেকে ফিরিয়ে আনা যেত।আমরা কৃষকদের সচেতন করছি। কিন্তু কৃষকরা নানা প্রলোভনে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন।