লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগ বেড়েছে

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর এখন কিছুটা কমে বিপদসীমার নিচে নেমেছে। তবে নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা, পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

রোববার (৫ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। সোমবার সকাল ৬টায় তা কমে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সকাল ৯টায় ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারী বর্ষণের ফলে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা—পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পুকুর। রোপা আমন ক্ষেত, বাদামসহ অনেক কৃষি জমির ফসলও চলে গেছে পানির নিচে।

বিশেষ করে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, কাকিনা, নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, তিস্তার পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় তীরবর্তী মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন গ্রামের ফারুক আহমেদ বলেন, “রোববার বিকেল পর্যন্ত তেমন পানি ছিল না, কিন্তু সন্ধ্যার পর হঠাৎ পানি বাড়তে শুরু করে। এখন পুরো ঘর পানিতে ডুবে গেছে, পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছি।”

হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, “তিস্তার পানি ঘরে ঢুকে গেছে, চোখের সামনে সব কিছু ডুবে যাচ্ছে।”

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর হক জিয়া জানান, “উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী।”

ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, “রাত ১২টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে।”

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, “রোববার সন্ধ্যার পর থেকে পানি বিপদসীমার ওপরে যায় এবং রাত বাড়ার সাথে সাথে তা ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছে। পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আবারও পানি বাড়তে পারে। নদীপাড়ের মানুষকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলো বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রশাসন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে।