লিটনের সেঞ্চুরি ‘উপহারের পরও বিপদে বাংলাদেশ
টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি-আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তার। ওয়ানডেতে তো হাফসেঞ্চুরির দেখাই পাননি। সেই লিটন দাস ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন এশিয়া কাপের ফাইনালে। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তার এই সেঞ্চুরি নিশ্চিতভাবেই দলের জন্য বড় এক উপহার।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো লিটনের অসাধারণ এই সেঞ্চুরির পরও বিপদে বাংলাদেশ! ভারতের বিপক্ষে ফাইনালটিতে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ উদ্বোধনী জুটিতেই তুলে ফেলেন ১২০ রান। সেটাও মাত্র ২০.৫ ওভারে। বাংলাদেশ শিবিরে তখন বিশাল সংগ্রহের সম্ভাবনারই উঁকি-ঝুঁকি। শক্ত এই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানরা নির্বিঘ্নে ব্যাট করবেন, এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই প্রত্যাশাকে মুহূর্তেই ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহীমরা, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহরা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৮ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৬ রান।
মেহেদী ফেরার খানিকক্ষণের মধ্যেই যুগপত ফিরে যান তারা। ফলে বিনা উইকেটে ১২০ থেকে বাংলাদেশ মুহূর্তেই পরিণত ৫ উইকেটে ১৫১ রানের দলে। মানে ৩১ রানের মধ্যে ৫ উইকেটের পতন। ইমরুল ২, মুশফিক ৫ মিঠুন ২ ও মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেছেন ৪ রান করে। হঠাৎ এই উইকেট পতনের ঝড় অন্যপ্রান্তে লিটনকেও যেন কিছু সময়ের জন্য ধমিয়ে দেয়। মেহেদী আউট হওয়ার সময় যে লিটনের রান ছিল ৬৬ বলে ৮৬, সেই লিটনকে সেঞ্চুরি ছুঁতে অপেক্ষা করতে হয় ২৯ ওভার পর্যন্ত।
শেষ পর্যন্ত তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ৮৭ বলে। ওই উইকেট পতনের মিছিলের আগ পর্যন্ত ঝড়ো গতিতেই ছুটছিলেন মাত্র ৩৩ বলেই হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলা লিটন।
এবারের এশিয়া কাপে চরম ব্যর্থ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। আগের ৫ ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৬ রান! ফাইনালে তাই ওপেনিংয়ে বড় একটা জুয়া খেলে টিমম্যানেমেন্ট। সৌম্য সরকারকে সরিয়ে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেয় মেহেদী হাসান মিরাজকে।
এই জুয়ায় অবিশ্বাস্য সফলও বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে ২০.৫ ওভারেই লিটন-মিরাজ গড়েন ১২০ রানের আলো ঝলমলে উদ্বোধনী জুটি। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু কে জানত, এমন দুর্দান্ত সূচনার ম্যাচেও এমন মোড়ক লাগবে!
কল্পনা না করলেও ভারতীয় স্পিনাররা সেটাই করেছেন। চাহাল ও দুই যাদব (কুলদীপ ও কেদার) মিলে হিমালয়ের চূড়ার দিকে ধাবিত বাংলাদেশকে নামিয়ে এনেছেন মাটিতে। উদ্বোধনী জুটির জুয়ায় সাফল্য পাওয়ায় টিমম্যানেজমেন্ট অবশ্যই বাহবা পাবে। একই ইমরুলকে ‘তিনে’ উঠিয়ে আনার পরিকল্পনার জন্য প্রশ্নবিদ্ধও হবেন।
এশিয়া কাপে আগের দুই ম্যাচেই ইমরুলকে খেলানো হয়েছে ৬ নম্বরে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৬-এ নেমে সফলও হন ইমরুল। সেই ইমরুলকে এদিন হঠাৎই আবার তুলে আনা হয় তিন নম্বরে। কিন্তু ব্যাটিং পজিশনের এই প্রমোশনটাকে হতাশায় রূপ দিয়েছেন ইমরুল। আউট হয়েছেন মাত্র ২ রান করে। এরপর একে একে ফিরে গেছেন মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহরা।
আশার কথা এই, সেঞ্চুরি উপহার দেওয়া লিটন এখনো উইকেটে আছেন। সৌম্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দলকে। এ পর্যন্ত তারা ষষ্ঠ উইকেটে গড়েছেন … রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। লিটন ১০৭ বলে ১০৮ ও সৌম্য ৮ বলে ৯ রানে ব্যাট করছেন। এই জুটির উপরই মূলত নির্ভর করছে ‘৩০০’-এর ইঙ্গিত দেওয়া বাংলাদেশ কত দূর যাবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন