লিনউড মসজিদে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে যুবক ‘হিরো’
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টার্চে আল নূর মসজিদ ও লিনউড মসজিদে খ্রিস্টান বন্দুকধারীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের নিহতের তথ্য দিয়েছে দেশটি। গুলিবর্ষণের সময় যখন মুসল্লিরা লুটিয়ে পড়ছিল তখন অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে তিন ব্যক্তি হামলাকারীকে ঠেকাতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। লিনউড মসজিদে বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নিতে সক্ষম হন এক যুবক। ফলে সেখানে হতাহত কম হয়, বেঁচে যায় অনেক প্রাণ। কিন্তু আল নূর মসজিদে বন্দুকধারীকে ঠেকানো যায়নি।
হামলায় বেঁচে যাওয়া দুজন প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে এসব তথ্য জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড অনলাইন। লিনউড মসজিদে বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নেওয়া যুবককে ‘হিরো’ বলছে সংবাদমাধ্যমটি।
লিনউড মসজিদে হামলার সময় সেখানে ছিলেন সৈয়দ মাজহারউদ্দিন। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন ঘটনা। বেঁচে যাওয়া মাজহারউদ্দিন বর্ণনা করেন তার বন্ধু কীভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকধারীকে নিবৃত্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
মাজহারউদ্দিনের ভাষায়, “চারপাশে মানুষ ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। আমি গুলি থেকে নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করলাম। আমি যখন আড়াল নিই তখন বন্দুকধারী লোকটি প্রধান প্রবেশদ্বারের দরজা দিয়ে ভেতরে আসে। মসজিদে তখন ৬০-৭০ জন লোক ছিল। মসজিদের মূল দরজার পাশে বৃদ্ধ লোকেরা বসে প্রার্থনা করছিলেন। বন্দুকধারী তাদের ওপর গুলি শুরু করে।’
মাজহারউদ্দীন বলেন, বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছিল। এ সময় মসজিদ থেকে একজন লোক বন্দুকধারীকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। সে ছিল তরুণ। সে মসজিদটির দেখাশোনা করত। সে একটি সুযোগ দেখেছিল এবং বন্দুকধারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছু সময় ধস্তাধস্তির পর সে অস্ত্রটি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়।
ওই যুবককে নায়ক আখ্যায়িত করে মাজহারউদ্দিন বলেন, যুবকটি বন্দুক কেড়ে নিলেও ওই শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে ঠিকমতো ট্রিগার খুঁজে পায়নি। এর মাঝে বন্দুকধারী সরে পড়তে থাকলে যুবকটি তার পিছু দৌড়ে যায়। কিন্তু লোকটি একটি গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়, যেটিতে তার সঙ্গীরা অপেক্ষা করছিল।
এদিকে ডিনস এভিয়ায় আল নূর মসজিদে বন্দুক হামলার ঘটনায় একজন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের বাইরে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পত্রিকায় আল নূর মসজিদের ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা করেন খালেদ আল-নোবানি নামের ওই ব্যক্তি। আল-নোবানি ও আরেকজন যুবক চেষ্টা করেছিলেন বন্দুকধারীর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার।
তিনি বলেন, আল নূর মসজিদের ভেতরে সন্ত্রাসী লোকটি যুবক, বৃদ্ধ, নারী সবাইকে গুলি করছিল। ‘আমি একটি দরজা দিয়ে চলে যাই, গেটটি ভেঙে বাচ্চাদের প্রথমে নিতে শুরু করি। আমার বন্ধুরা সাহায্য করে।’
তিনি বলেন, ‘একজন লোক লাফ দিয়ে বন্দুকধারীর অস্ত্রটি ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু বন্দুকধারী তার দিকে সরাসরি গুলি করল।’ আল নোবানি জানান, তিনিও ওই লোককে অনুসরণ করে বন্দুক কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারেন যে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করতে পারবেন না।
আল-নোবানি বলেন, ‘বন্দুকধারীটি মসজিদের ভেতর গুলি চালানোর সময় বাজে কথা বলে আর গান গেয়েছে।
ঘটনাস্থলে পুলিশের পৌঁছুতে দেরি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন নোবানি। তিনি বলেন, ‘পুলিশ পৌঁছতে ২০ মিনিট সময় নেয়। আমরা শহরের মাঝখানেই আছি। কোনো ট্রাফিক ছিল না। সর্বোচ্চ দুই মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যেত।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন