শনিবার থেকে চলবে ‘ড্যামেজ’ হওয়া ট্রেনের ১২ বগি
শনিবার থেকে ড্যামেজ হওয়া ১২ বগি যুক্ত হচ্ছে ট্রেনের মূল র্যাকে। বগিগুলো ঈদুল ফিতরের আগে মেরামতের কাজে হাত দেয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মেরামতের ৬ দিনের মাথায় ১২টি বগির এলার্ম সিগনাল পাইপে দেখা দেয় কিছু ত্রুটি। রেলওয়ের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ড্যামেজ’।
ড্যামেজ মানে একেবারে অচল নয়। একেবারে অচল হলে তাকে বলা হয় ‘কনডেম’। আর ‘কনডেম’ হলে উক্ত বগি আর কোনদিনই চলবে না। এমনই দাবি করেছেন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খোদা
এ বিষয়ে কথা হয় রেলওয়ের ম্যাকানিক্যাল এর পরিচালক তাবাসসুম-বিনতে-ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বগি মেরামতের জন্য আমাদের বাজেট ছিল ৭০ লাখ টাকা করে। মূলত আমাদের খরচ হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা করে। ঈদের আগে মোট ১৪ টি গাড়ির মধ্যে রিকন্ডিশন গাড়ি হচ্ছে ১২ টি। নতুন দুটি গাড়ি আনা হয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে। এ ১২টি গাড়ি আমাদের মেরামত করতে হয়েছে। তাতে মোট খরচ হয়েছে ৬ কোটি টাকার মতো।’
‘আপনারা জানেন আমাদের পশ্চিম অঞ্চলে মিটার গেইজে ইয়ার ব্রেকের কোনো গাড়ি নেই। আগেও কখনো ছিল না। এর মধ্যে দুটি গাড়ি সমস্যা ছিল। আর তা ছিল এলার্ম সিগনাল পাইপে। এটা না নষ্ট হলেও বিকল্প পদ্ধতিতে চালানো যেত। কিন্তু যাত্রীর প্রয়োজনে হঠাৎ ট্রেন থামাতে গাড়ির ভেতর থেকে এলার্ম চেইন টানা যেত না। চেইনটি অকার্যকর থাকতো। শুধুমাত্র এ সেবাটি ছাড়া বাকি সব সুবিধা এ গাড়িগুলোতে ছিল।’
এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খোদা বলেন, ‘আমরা কিন্তু বগিগুলো মেরামতের সময় এ পাইপ পরিবর্তন করি নাই। পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ পাইপগুলো পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। তাই বগিগুলো আমরা সাময়িক বন্ধ রেখেছিলাম।’
‘এজন্য এ ১২টি বগিকে ড্যামেজ ঘোষণা করেছিলাম। এটা একেবারে নষ্ট হয়েছে এমন নয়। একটি বগিতে যেকোনো ছোটোখাট সমস্যা থাকলে রেলওয়ের পরিভাষায় আমরা বলি ড্যামেজ’।
রেলওয়ের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ১২টি বগির এলার্ম চেইনের পাইপ পরিবর্তন করেছি। আশা করছি শনিবার থেকে বগিগুলো রীতিমত চলবে।’
বগিগুলোর মেরামতের পরপরই ড্যামেজ ঘোষণা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মু: কুদরত এ খোদা বলেন, ‘ড্যামেজ এবং কনডেম এর মধ্যে পার্থক্য আছে। রেলওয়ের ভাষায় ড্যামেজ হচ্ছে সাময়িক কোনো সমস্যা তৈরি হয়ে গেলে তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়। আর কনডেম হচ্ছে তা আর কোনদিনই চলবে না। এ ট্রেনটি অর্থ্যাৎ পুরো র্যাকের মধ্যে মাত্র দুটি গাড়ি ড্যামেজ হয়েছে। তাও আবার শুধুমাত্র এলার্ম চেইন পাইপের অংশ।’
শুরুতে বগিগুলোয় এ পাইপের অংশ মেরামত করা হলো না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তখন দেখেছিলাম পাইপের অংশটি কাজ করছে। এজন্য লাইনে বগিগুলো ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে যখন কোনো কারণে আর কাজ করছে না তখন আমরা তা মেরামতের উদ্যোগ নেই। এ ধরণের সমস্যা অনেক সময় নতুন গাড়িতেও হয়। তখনও মেরামত করে ঠিক করা হয়।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কারখানা থেকে মোট ১৯টি গাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১২টি গাড়ি মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি আরও ৭টি গাড়ি মেরামতের অপেক্ষায় আছে। মেরামত শেষ হলেই তা কাজে লাগাবে রেলওয়ে।
কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা বাকি ৭টি গাড়ি ঈদুল আযহার আগেই মূল র্যাকের সাথে যুক্ত হবে।
সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সংবাদ সম্পর্কে বাংলাদেশ রেলওয়ের মেকানিক্যাল যুগ্ম মহাপরিচাক মো: মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত ১৪টি গাড়ি মেরামতে খরচ বাবদ ১১ কোটি ২০ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা সঠিক নয়। এখানে প্রতিটি গাড়ি মেরামতের জন্য গড় খরচ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে ১২টি গাড়ি মেরামত বাবদ খরচ হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন