‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। ভয়াবহ সেই দিনটির কথা উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে। জবানবন্দি থেকে পাওয়া যায় সেদিনের ভয়াবহতার চিত্র। জানা যায় ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন ৩২ নম্বরের বাড়িটির ভেতরে-বাইরে। সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ত্রয়োদশ পর্ব।
প্রসিকিউশনের ৪৫নং সাক্ষী মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ আদালতকে বলেন, তার এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের একই রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বাই নম্বরে জেনারেল জিয়াউর রহমান সিনিয়র ছিলেন। কিন্তু জেনারেল ওসমানীর পরে ১৯৭২ সালে জিয়াউর রহমানের জায়গায় তাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করা হলে তিনি সেটার প্রতিবাদ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে তিনি তাকে বলেন, ‘তোমার কথা শুনেছি। There is something called political decision. জবাবে শফিউল্লাহ বলেন- স্যার, From today and now onward I am a victim of circumstances.’ এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমরা বড় বড় কথা বল, যাও কাল থেকে তুমি জেনারেল ওসমানীর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নাও।’
এরপর শফিউল্লাহ তার অফিসে গিয়ে প্রথমে কুমিল্লার জিয়াউর রহমানকে ফোন করেন। টেলিফোনে তার নিয়োগসহ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপের বিস্তারিত জানান তিনি। কথা শোনার পর জিয়া বললেন, ওকে শফিউল্লাহ Good bye. এর সপ্তাহখানেক পর একটা নতুন পদ ‘ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ’ সৃষ্টি করে সেই পদে জিয়াকে পোস্টিং দেওয়া হয়। এই পদ পাওয়ার পরও তার মনে ক্ষোভ থেকে যায়।
রক্ষী বাহিনী গঠিত হওয়ার পর এই বাহিনী সম্পর্কে কিছু মহল বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে রক্ষী বাহিনী গঠিত হয় বলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এছাড়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অফিসার মেজর ডালিম তার ছাত্র জীবনের কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। এই অফিসারটি উচ্ছৃংখল প্রকৃতির ছিল। ১৯৭৩ সালে এক বিয়েতে গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলের সাথেও তার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে কিছু সেনা অফিসারকে নিয়ে সে গাজী গোলাম মোস্তফার বাড়িতে হামলা করে। এই জন্য তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল জিয়ার পিএস মেজর নুর সরকারের বিরুদ্ধে কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করায় তাকেও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এতে কিছু মহল সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে এবং সেই অপপ্রচারে সেনাবাহিনীর মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রক্ষী বাহিনীকে কার্যকর করার জন্য গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হলে এই ব্যাপারেও অপপ্রচার হয় এবং সামরিক বাহিনীতে একটি অসন্তোষ দেখা যায়।
শফিউল্লাহ আদালতকে আরেক দিনের কথা জানিয়ে বলেন, কর্নেল তাহের একদিন আমার অফিসে এসে বলে ‘স্যার, এতদিন তো চিফ অব আর্মি স্টাফ থাকলেন, এখন এই পদটা জিয়াউর রহমানের জন্য ছেড়ে দেন।’ তার কাছ থেকে এই অপ্রত্যাশিত কথাগুলি শুনে তখনই তাকে বলি Do you know, you are down categorized. তুমি এখনই সিএমএইচ যাও এবং স্বসম্মানে মেডিকেলি Board out হয়ে যাও। তা না হলে তোমাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হবো।’ বঙ্গবন্ধুকে এই বিষয়টি জানালে তিনিও এটা সমর্থন করেন। অবশেষে কর্নেল তাহের মেডিকেলি অবসর গ্রহণ করে। তাতেও আর্মিতে কিছু প্রতিক্রিয়া অপপ্রচার হয়।
কোন অফিসারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে ব্যবস্থা নেয়া হলে তারা জেনারেল জিয়ার নিকট শেল্টার নেয়। শফিউল্লাহ আদালতকে বলেন, একবার বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন ‘জিয়া আমাকে বার বার বলছে, সে বেটার সার্ভিস দিতে পারবে, তোমাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সকালে তার বেডম্যান দরজা ধাক্কা দিলে তিনি বের হন এবং দেখেন তার ডিএমআই লেঃ কর্নেল সালাউদ্দিন সেখানে উপস্থিত। তিনি জিজ্ঞাসা করে, স্যার, আপনি কি আরমান এবং আর্টিলারিকে শহরের দিকে যেতে বলেছেন। তিনি বলেন, না তো কেন? উত্তরে সে বললো তারা তো রেডিও সেন্টার, গণভবন এবং ৩২নং রোডের দিকে যাচ্ছে। তার কথা শুনে শঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘Does shafayet know about it? উত্তরে তিনি বলেন ‘তা জানি না, স্যার, আমি প্রথমেই আপনার কাছে এসেছি।’ তখন তাকে বললেন, ‘তুমি দ্রুত সাফায়াতের কাছে যাও এবং তিনটা পদাতিক ব্যাটালিয়নকে দিয়ে প্রতিহত করার জন্য আমার নির্দেশ সাফায়াতকে জানাও আমি তাকে টেলিফোনে নির্দেশ দিচ্ছি।’ তাকে পাঠিয়ে দিয়েই রুমে ঢুকে টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুকে চেষ্টা করেন কিন্তু পাননি। পরে সাফায়াত জামিল, চিফ অব এয়ার স্টাফ এ কে খন্দকার, চিফ অব নেভাল স্টাফ এম এইচ খান, ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ জিয়াউর রহমান, সিজিএস খালেদ মোশারফকে টেলিফোন করেন। সাফায়েতের সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হয় যেন তাকে ঘুম থেকে উঠানো হয়েছে। তখন তাকে তিনটা পদাতিক ব্যাটালিয়ন দিয়ে আর্টিলারি ও আরমানকে প্রতিহত করার নির্দেশ দেন।
বঙ্গবন্ধু ফোনে তার গলার আওয়াজ শুনেই বলে উঠলেন ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে বোধ হয় মেরে ফেলেছে তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’ উত্তরে বলেছিলেন, I am doing something, can you get of the house. জিয়া ও খালেদ মোশারফকে ফোন করে তাড়াতাড়ি তার বাসায় আসার কথা বলেন। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে তারা বাসায় এসে পড়ে। জিয়া ইউনিফরম পরা ও সেভ করা এবং খালেদ মোশাররফ নাইট ড্রেসে নিজের গাড়িতে আসে। সেখানে দুজনকেই এরইমধ্যে জানা পরিস্থিতি জানালেন এবং খালেদ মোশাররফকে ৪৬ ব্রিগেডে তাড়াতাড়ি গিয়ে সাফায়াত জামিলকে সাহায্য করার জন্য নির্দেশ দেন। কারণ তখনও পর্যন্ত তার আগের দেওয়া নির্দেশের কোন তৎপরতা দেখতে পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে ডেপুটি চিফ জিয়া বললেন, Do not send him, he is going to spoil it.
সকাল প্রায় ৭টার সময় রেডিও ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কথা শুনেন বলে জানান মেজর শফিউল্লাহ। অফিসে অবস্থানকালে ডেপুটি চিফ তার সামনেই বসা ছিলেন। এক পর্যায়ে ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়া বললেন, সিজিএস খালেদ মোশাররফ আর বাইরে যেতে দিও না। এই সময় দরজা ধাক্কা দিয়ে মেজর ডালিম ১০-১৫ জন সৈন্যসহ সশস্ত্র অবস্থায় তার অফিসে ঢুকে এবং অস্ত্র তার দিকে তাক করে দাঁড়ায়। ডালিম চাকরিচ্যুত অফিসার হয়েও সেইদিন ইউনিফরম পরিহিত ছিল। তিনি ডালিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘ডালিম আমি এই অস্ত্র দেখে এবং ব্যবহারে অভ্যস্ত, তুমি যদি এটা ব্যবহার করতে এসে থাক তাহলে ব্যবহার কর আর তা না হলে যদি কথা বলতে এসে থাক, তাহলে তোমাদের সৈন্যদের অস্ত্র বাইরে রেখে এসো। এরপর ডালিম তার অস্ত্রটি নিচের দিকে মুখ করে বলে ‘Sir, President wants you in the radio station. তখন বলিলাম প্রেসিডেন্ট তো মারা গেছেন। সে আমাকে বলল Sir, you should know Khandaker Mostaque is the President now. তখন বলি Khandaker Mostaque may be your President, he is not mine. ডালিম বলল Sir, don’t make me do something for which I did not come. তখন তাকে বলেন ‘তোমার যা খুশি করতে পার, আমি আমার Troops এর কাছে যাচ্ছি।’ এই কথা বলে তার অফিস থেকে বের হয়ে ৪৬ ব্রিগেডে রওনা দেন। ডালিম তার সৈন্য-সামন্ত ও অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত গাড়ি নিয়ে তার পিছনে পিছনে যায়। সেখানে মেজর রশিদ ও মেজর হাফিজ তাকে রেডিও সেন্টারে যাবার জন্য চাপ দিতে থাকে। সেখানের পরিবেশ দেখে হতভম্ব হয়ে যান এবং তাদের চাপের মুখে বলেন যে, ‘আমি একা যাবো না, এয়ার এবং নেভাল চিফের সাথে কথা বলি।’
কিছুক্ষণ পর তারা এলেন। কোন কাউন্টার অ্যাকশনে রক্তপাত ও সিভিল ওয়ার হতে পারে এই ধরনের পরিস্থিতি ধারণা করে মেজর রশিদ এবং মেজর ডালিমের অস্ত্রের মুখে তিনি রেডিও সেন্টারে যেতে বাধ্য হন। এই সময়ের মধ্যে এয়ার ও নেভি চিফ পৌঁছে যায়। ডালিম ও তার অস্ত্রধারীরা এস্কট করে। রেডিও সেন্টারে ঢুকেই দেখে খন্দকার মোস্তাক বসা এবং তার বাম পাশে তাহের উদ্দিন ঠাকুর দাঁড়ানো। খন্দকার মোস্তাকের পরনে সাদা প্রিন্সকোর্ট, মাথায় টুপি এবং তাহের উদ্দিনের পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবী, মাথায় সাদা কিস্তি টুপি ছিল। রুমে ঢোকার পর খন্দকার মোস্তাক তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, শফিউল্লাহ Congratulation, your troops have done an excellent job, now do the rest. তিনি জিজ্ঞাসা করলেন what rest. খন্দকার মোস্তাক বললেন you should know it better. তিনি বললেন ‘that case leave it to me’ এই কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে আসছিলেন তখন তাহের উদ্দিন ঠাকুর বললেন, স্যার, উনাকে থামান উনার আরো দরকার আছে, এই কথা বলার সাথে সাথে ডালিম, রশিদ ও আরো একজন সম্ভবতঃ মোসলেম তাকে আটকে আরেকটি রুমে নিয়ে যায়। সেই রুমে তাহের উদ্দিন ঠাকুর আসেন এবং তাকে আনুগত্য স্বীকারের একটা খসড়া লিখে দেয় যা তার কণ্ঠে রেকর্ড করানো হয়। তারপর খন্দকার মোস্তাক বলেন, জুম্মার আগে প্রেসিডেন্ট-এর শপথ অনুষ্ঠান হবে। তার চিফদের সেখানে দেখতে চায়। বঙ্গভবনে খন্দকার মোস্তাক প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
সেই অনুষ্ঠানে তার তিন চিফ, বিডিআর চিফ, ডেপুটি চিফ জিয়া, সিজিএস খালেদ মোশারফ, ব্রি. খলিল, মেজর রশিদ, মেজর ডালিম, মেজর নুর, মেজর পাশা, মেজর হুদা, মেজর ফারুকসহ আরো অনেকে ছিল। সিভিলিয়ানদের মধ্যে যতদূর মনে পড়ে তাহের উদ্দিন ঠাকুর উপস্থিত ছিলেন। তারপর মেজর রশিদ বললেন পাশের রুমে কনফারেন্স হবে। সেই কনফারেন্স রুমে গিয়ে তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সম্ভবতঃ বরিশালের নুরুল ইসলাম মঞ্জুসহ আর্মির কিছু অফিসারকে দেখেন। সেসময় খন্দকার মোস্তাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম এবং ওবায়দুর রহমানকে একই সুরে কথা বলতে দেখেছেন। আরো দেখেছেন খন্দকার মোস্তাক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ‘সূর্যসেনা’ নাম দেয়। সেদিন বিকেলে মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সেই অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিবর্গকে অভ্যর্থনা জানান একজন মহিলা। তিনি ছিলেন রশিদের স্ত্রী, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় তিনি প্রথম সারিতে বসা ছিলেন। সেখানে আর কোন মহিলাকে দেখেছি বলে মনে হয় না। অনুষ্ঠান শেষে বাসার দিকে রওনা দিবেন এমন সময় তাহের উদ্দিন ঠাকুর বলেন, কনফারেন্স হবে এখন যাবেন না। ১৮ তারিখ সকাল পর্যন্ত একই কাপড়ে বঙ্গভবনে থাকতে বাধ্য হন। এই কয়দিন ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ জিয়া, শাহ মোয়াজ্জেম, ওবায়দুর রহমানকে বঙ্গভবনে আসা যাওয়া করতে দেখেছেন। তাহের উদ্দিন ঠাকুর সাহেব সব সময় তার সঙ্গে ছিলেন, খন্দকার মোস্তাক প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রথমে গাজী গোলাম মোস্তফাকে রেডক্রস চিফ থেকে অব্যাহতি দেন। দ্বিতীয় কাজটি করেন, মাহবুব আলম চাষীকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হিসাবে নিয়োগ দেন। ১৮ই আগস্ট বঙ্গভবন থেকে এসে রাতে একটি কনফারেন্স ডাকেন। সেই কনফারেন্সে এয়ার, নেভি চিফ, ব্রি. খলিল, আইজি নুরুল ইসলাম, ডিজিএফআই, ব্রি. রউফ ডিএমএ, কর্নেল নুর উদ্দিন, ডিএসটি কর্নেল মালেকসহ সিনিয়র আর্মি অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
এই কনফারেন্সে আলোচ্য বিষয় ছিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, কিছু চাকরিরত এবং কিছু উচ্ছৃঙ্খল চাকরিচ্যুত সামরিক অফিসার ও সৈনিক দ্বারা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কোন সম্পর্ক নাই এবং তাকে বলা হয় যে, এইসব উচ্ছৃঙ্খল অফিসারদেরকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরের দিন ১৯ তারিখ ফরমেশন কমান্ডারদের একটি কনফারেন্স ডাকে। সেদিন কনফারেন্স শুরু হওয়ার আগে ৪৬ ব্রি. কমান্ডার কর্নেল সাফায়েত জামিল দেখা করে বলে, ‘Don’t trust your Deputy, he is behind all those things’। তাকে বললাম, কথাগুলি বলতে তোমার এতদিন সময় লাগল? কোন উত্তর না দিয়ে সাফায়েত বললেন, Killer must be punished. তাকে বললাম আজকের কনফারেন্স সেই জন্যই। একবার তারা চেইন অব কমান্ডে এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সেই কনফারেন্সে মেজর রশিদ ও মেজর ফারুক আসে। কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিল শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী অফিসারদের সেনানিবাসে ফেরত আনা। ফেরত আনার উদ্দেশ্যে কৌশলগতভাবে বলা হয়, India might attack Bangladesh. আমাদের এটা প্রতিহত করতে হবে। সেহেতু রিগ্রুপিং-এর দরকার আছে। এক পর্যায়ে সাফায়েত জামিল, মেজর রশিদ এবং মেজর ফারুক লক্ষ্য করে বলল, They must be put to Court Martial. এতে তাদের মুখ মলিন হয়ে যায়। মনে হলো কনফারেন্স ডাকার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে গেছে। তখন কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করে চলে আসে এবং প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকে।খন্দকার মোস্তাক
২২ আগস্ট বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মোস্তাকের কাছে যায় এবং একই কথা বলে Troops ফিরিয়ে এনে রিগ্রুপিং-এর প্রয়োজনীয়তার কথা জানায়। তিনি বলেন, wait and see. সেদিনও বঙ্গভবন থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসেন। এরপর ২৪শে আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে একটা নিউজ বুলেটিনে জেনারেল ওসমানীকে ডিফেন্স অ্যাডভাইজার করার ঘোষণা দেন। এই খবরের পর পরই প্রেসিডেন্টের একটা ফোন পান। তিনি বলেন, শফিউল্লাহ, তুমি শুনেছ? আমি বললাম শুনেছি। ‘Did you like it?’ আমি বলি, ভালো হয়েছে। তারপর তিনি আমাকে সেদিন বিকেল ৫.৩০টায় বঙ্গভবনে যেতে বলেন। সময় মতো বঙ্গভবনে গিয়ে জেনারেল জিয়া এবং খলিলকে বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে যেতে দেখে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার আগে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে দেখা করার জন্য বললে তার সঙ্গে দেখা করেন। জেনারেল ওসমানী তার অনেক প্রশংসা করে বললেন ‘তুমি দেশের জন্য অনেক কিছু করেছ, এখন তোমার সার্ভিস বিদেশে দরকার।’ এর অর্থ উপলব্ধি করে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গেই প্রেসিডেন্টের অফিসে যান। প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোস্তাকও তার অনেক প্রশংসা করে বলেন, তোমার সার্ভিস এখন দেশের বাইরে দরকার। তখন তিনি বলেন, Who is replacing me? জবাব আসে, জিয়া। এই পর্যায়ে তিনি বলেন- Don’t think at his stage Zia will misunderstood. খন্দকার মোস্তাক বলেন This will be taken care of. তিনি বাইরে যেতে রাজি নয় জানালে বলেন, ‘Don’t think of staying in the country.’ তখন উচ্চবাচ্য না করে ক্যান্টনমেন্টে ফেরত আসে। সেখানে এসে দেখেন জেনারেল জিয়া এরইমধ্যে চিফ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে অফিসারদের সাথে মিটিং করছেন।-চ্যানেল আই অনলাইন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন