শরণখোলার সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে প্রকল্পের ১০লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

অর্থ বছর শেষ হলেও বাগেরহাটের শরণখোলায় হাট-বাজার রক্ষণাবেক্ষণ খাতের প্রায় ২৬ লাখ টাকার চারটি প্রকল্পের একটিরও কোনো কাজ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কাজ না করেই দুটি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন প্রকল্পের সভাপতি সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম। এবং বাকি দুটি প্রকল্পের ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার কাজও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

জুন মাস শেষে বাৎসরিক হিসাব করতে গিয়ে প্রকল্পের কাজ না হওয়া এবং টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানতে পারেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।

প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকৌশলী তিনি নিজেও জানেন এ বিষয়ে। তারও স্বাক্ষর নেই প্রকল্প অনুমোদনে। প্রকল্পের সদস্য চেয়ারম্যানরাও স্বাক্ষর করেননি। এমনকি কাজ বাস্তবায়নে যে ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারও কিছু জানা নেই এই প্রকল্প সম্পর্কে। ধর্মীয় লেভাসের আড়ালে ইউএনও জাহিদুল ইসলামের এমন নীতি বিবর্জিত কর্মকান্ডে বিষ্মিত হয়েছেন তারা।

গত ২ এপ্রিল শরণখোলা থেকে বদলি হয়ে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় যোগদান করেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩—২৪ অর্থ বছরের শরণখোলা উপজেলার হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় চারটি প্রকল্প গ্রহন করেন সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রায়েন্দা ইউনিয়নের রায়েন্দা বাজারের সবজি মার্কেটের নতুন টলশেড নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার দুটি প্রকল্প এবং খোন্তাকাটা ইউনিয়নের খোন্তাকাটা বাজারের ড্রেন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকা ও সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারের ড্রেন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকার প্রকল্প।

পরবর্তীতে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ড্রেন নির্মাণের প্রকল্পটি গোপনে বাতিল করে সমপরিমান অর্থে ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের দুটি টলশেড মেরামতের আলাদা প্রকল্প তৈরী করেন। এর পর চলতি বছরের (২০২৪) ১৫ জানুয়ারি হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম একাই স্বাক্ষর করে রেজুলেশন তৈরী করে ওই প্রকল্প অনুমোদন দেখান। গৃহিত চারটি প্রকল্পের মধ্যে রায়েন্দা ইউনিয়নের টলশেড নির্মাণের দুটি প্রকল্পের ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করলেও বাকি দুটি প্রকল্পের ১০লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান ইউএনও জাহিদুল ইসলাম।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কোন প্রকল্প গ্রহন করলে তা উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রাক্কলন তৈরী করতে হয়। এছাড়া ওই খাতের অর্থে গৃহিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সব সময় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু সাবেক ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম টাকা আত্মসাত করার জন্য গোপনেই করেন সবকিছু। রায়েন্দা ইউনিয়নের প্রকল্প দুটি স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি বদিউজ্জামান সোহাগ উদ্বোধন করায় তিনি ওই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের সাহস পাননি। বাকি দুটি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা মেসার্স অনিক এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চেক ব্যবহার করে উত্তোলন করে নিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নে ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এব্যাপারে কোনো জবাব দেননি। বিষয়টি জেনে ফেলায় তিনি আমার ইউনিয়নের প্রকল্পটি পরিবর্তন করে একই তারিখের আরেকটি রেজুলেশন তৈরী করে ধানসাগর ইউনিয়নে অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেখিয়েছেন। তবে হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে ওই রেজুলেশনে আমার কোনো স্বাক্ষর নেই।

সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, আমার ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারে ড্রেন নির্মাণের একটি প্রকল্প দেখিয়ে সাবেক ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম পাঁচ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। অথচ এধরনের কোনো কাজ আমার ইউনিয়নে হয়নি।

ধানসাগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মইনুল ইসলাম টিপু বলেন, আমার ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের দুইটি টলশেড মেরামতের নামে পাঁচ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহন করেন সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম। কিন্তু ওই কমিটির সদস্য হয়েও এর কিছুই আমি জানতে পারিনি। পরে দেখি দুটি টলশেডের শুধুমাত্র ঢেউটিন পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে প্রকল্পের বাকি টাকা একাই আত্মসাত করেছেন তিনি। এছাড়া শেডের পুরনো টিন ও অন্যান্য মালামালও বিক্রি করে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ইউএনও’র কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত আনার দাবি জানাই।

রাজাপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম কবির তালুকদার বলেন, দুইটি শেডে ২২মিলি মিটারের মাত্র সাড়ে ১০ বান্ডেল টিন লাগিয়ে পাঁচ লাখ টাকা হজম করেছেন ইউএনও জাহিদুল ইসলাম। অথচ টলশেড দুটির সমস্ত আরসিসি পিলারের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। যে কোনো সময় ধসে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ধর্মীয় লেভাসের আড়ালে তিনি এতো বড় জালিয়াতি করতে পারেন তা আমাদের জানা ছিল না।

মেসার্স অনিক এন্ট্রারপ্রাইজের মালিক মো. অনিক হোসেন গাজী বলেন, হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণের কোনো কাজ আমি করিনি। সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম আমার কাছ থেকে শুধু চেক চেয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চেক নিয়ে তিনি কি করেছেন তা আমার জানা নেই।

এব্যপারে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী ও হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. ফেরদৌস আলম বলেন, ওই চার প্রকল্পের কোনোটিরই প্রাক্কলন তৈরী করিনি আমি। ইউএনও কিভাবে টাকা উত্তোলন করেছেন তাও জানা নেই।
জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা (ই্উএনও) সুদিপ্ত কুমার সিংহ বলেন, আমি এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। প্রকল্পের বিষয়টি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে শরণখোলার সাবেক ইউএনও ও বর্তমানে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কর্মরত মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানদের এবং কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করে আরএফটির (রিকোয়েষ্ট ফর টেন্ডার) মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদার কাজ না করলে তা আমার দেখার বিষয় না।