শাঁ করে উল্টো পথে, ভিআইপির গাড়িও আছে
রাস্তা একটু ফাঁকা পেলে মোটরসাইকেলচালকেরা উল্টো পথে দিচ্ছেন ছুট। ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনও সুযোগ বুঝে উল্টো পথে চলছে। পুলিশ ও ভিআইপির গাড়িবহরও উল্টো পথে চলতে দেখা যায়। উল্টো পথে চলা কাভার্ড ভ্যান থামাতে গিয়ে গত দুদিন আগেও পুলিশের এক কনস্টেবল প্রাণ হারিয়েছেন। এরপরও উল্টো পথে চলা গাড়ির সংখ্যা কমছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর অন্তত ছয়টি বড় ট্রাফিক মোড় ঘুরে দেখা গেছে, একটি রাস্তায় সামান্য যানজট তৈরি হলেই গাড়িগুলো উল্টো পথে চলতে শুরু করে। আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তার একপাশ খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এ রাস্তায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে গাড়ির জট বেশি লাগে। তবে খুব বেশি সময় জট থাকে না। এ সময় দ্রুত যাওয়ার জন্য অনেক গাড়ি উল্টো পথে নিয়মিত যাতায়াত করছে। পুলিশের একজন ট্রাফিক সার্জেন্টকেও উল্টো পথে চলতে দেখা গেছে। যদিও তখন পাশের সড়কটিও চালু ছিল।
রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলের বিপরীতে মিন্টো রোড। এই পথে দেশের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিয়মিত যাতায়াত করেন। গতকাল বিকেলে এই পথের হালচাল দেখার সময় মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের একটি গাড়িকে উল্টো পথে চলতে দেখা গেছে। যদিও গাড়িটি রাজসিক ভাস্কর্যের একটু আগ পর্যন্ত এসে, আবার ফিরে গেছে। এর একটু পর একজন ভিআইপিকেও তাঁর গাড়িবহর নিয়ে উল্টো পথে যেতে দেখা গেছে।
মিন্টো রোডে কথা হয় মোটরসাইকেলচালক মো. ফয়েজের সঙ্গে। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ছোট বাহন হওয়ায় সুযোগ পেলেই লোকজন উল্টো পথে চালায়। উল্টো পথে বিপদ হতে পারে, এটা অনেকে মাথায় রাখেন না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি উল্টো পথে গাড়ি না চালাতে চেষ্টা করেন।
এ ছাড়া অনেক মোটরসাইকেলচালককে দেখা গেছে হেলমেট মাথায় না দিয়ে মোটরসাইকেলের হাতলে হেলমেট ঝুলিয়ে রাখতে।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে উল্টো পথে আসা একটি কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়েন সালনা (কোনাবাড়ী) হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন নিহত হন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দুর্ঘটনার ঘটনাটি ঘটে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনকারী বাসও প্রায়ই ‘সময় বাঁচানোর’ কথা বলে উল্টো পথে যাতায়াত করছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, উল্টো পথে গাড়ি না চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ, পোস্টার-ব্যানার লাগানো এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নাটিকাও দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাফিকে জনবল বাড়ানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে।
মোটরসাইকেলের চালকদের হেলমেট না পরার বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, মোটরসাইকেলচালকদের ক্ষেত্রে পুলিশ কোনো রকম ছাড় দেয় না। আগের তুলনায় হেলমেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ট্রাফিক আইন না মানারও সংখ্যা কমেছে। রাস্তায় পুরোপুরি শৃঙ্খলা আনতে হলে পুলিশের পাশাপাশি জনগণকেও সহযোগিতা করতে হবে।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত দুটি ট্রাফিক সিগন্যাল আসাদগেট ও বিজয় সরণি। এ দুটি জায়গায় পুলিশের কড়াকড়ি থাকার কারণে এবং গাড়ির চাপ বেশি থাকায় উল্টো পথে কেউ সহজে চলতে পারে না। তবে দু-একজন মোটরসাইকেলচালককে উল্টো পথে যেতে দেখা গেছে।
উল্টো পথে মোটরসাইকেল চালানো এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যানজট হলে অনেক সময় বসে থাকতে হয়। উল্টো পথে না চলে উপায় থাকে না। এটি অনেক বিপজ্জনক এবং দণ্ডনীয় জেনেও তিনি এ কাজ করেন।
পুলিশের রমনা ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিকেল থেকে সন্ধ্যা অনেক ব্যস্ত সময়। মূল সড়ক সচল রাখা সবচেয়ে বড় বিষয়। মোটরসাইকেলচালকদের ধরতে গেলে রাস্তা সামলানো যাবে না। মন্ত্রী, ভিভিআইপি ও সাংবাদিক উল্টো পথে গেলে তাঁরা কিছু করতে পারেন না।-প্রথম আলো’র সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন