শাপলা না দেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছাচারিতা: নাহিদ ইসলাম

নির্বাচন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেয়া হচ্ছে না। শাপলা না দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছাচারিতা- এমন কথায় জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর পর্যটন মোটেলে রাজশাহী বিভাগের মহানগর ও জেলাগুলোতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব বাছাইয়ের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা ঐকমত্য কমিশনের বিষয় যেহেতু, এটা গণভোটে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনেই আমাদের নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। তবে এই সরকারের কিছু সমালোচনা এসেছে। আমাদের জায়গা থেকেও বলেছি। কিছু উপদেষ্টাদের বিষয়েও কথা এসেছে। এটা যথাযথভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অ্যাড্রেস করা উচিত।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই ঘোষণা করতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং এই আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। এই আদেশের বা সংস্কারের ভিত্তিটা হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে এই ধরনের সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান যে প্রেসিডেন্ট আছেন চুপ্পু, তিনি এই আদেশ দিতে পারেন না। সেটা বৈধ হবে না, জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বৈধতার জায়গা থেকে এই আদেশটি জারি করবেন। পরবর্তীতে যে সংসদ হবে, সেখানে একটা সংস্কার পরিষদ হওয়ার কথা, সেখানে এই সকল পরিবর্তিত বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হবে। এগুলো যখন নিশ্চিত হবে, সেখানে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করব।’

তিনি বলেন, ‘তবে আমরা বলেছি, আমরা স্বাক্ষর করতে চাই। এই সংস্কারের পুরো অগ্রযাত্রাতেই আমরা ছিলাম। অবশ্যই আমরা সংস্কার চাই। স্বাক্ষর করার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা শুনেছি, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশটা দেওয়া হবে। আমরা বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে আমরা সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় দেখতে চাই। একটি হচ্ছে, নোট অব ডিসেন্ট বলে কোনো কিছু থাকবে না। যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে অথবা ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কারের জন্য যে সমস্ত বিষয়কে লিপিবদ্ধ করেছে, সেই বিষয়গুলো গণভোটে যাবে এবং জনগণ রায় দেবে সেই বিষয়গুলো পরিবর্তিত হবে কি না।’

নির্বাচনী প্রতীক প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শাপলা না দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের একটি স্বেচ্ছাচারিতা। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই যদি একটি মনোবাসনা চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা ধরে নেব নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এমন ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হবে। আইনি ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলে অন্য যেকোনো প্রতীক নিতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে যদি প্রতীক না দেওয়া হয়, তাহলে রাজপথেই নামব। আমরা চাই না রাজপথে নামতে। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এগোতে চাই। আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্য শাপলা প্রতীক নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম থেমে নেই। প্রার্থী বাছাই চলছে এবং খুব দ্রুতই প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, আগামীর সংসদে তরুণদের ভয়েস থাকবে। ছাত্র, তরুণ, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, প্রবাসী, নারীসহ সমাজের সব গ্রহণযোগ্য মানুষকে আমরা তুলে আনতে চাই।’

কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘যদি জোটে যেতে হয়, তা অবশ্যই একটা নীতিগত জায়গা থেকে আসবে। জুলাই সনদ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক জায়গা।’ তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, সংস্কারের বিপক্ষে বা ইতিহাসের দায়ভার যাদের ওপর রয়েছে, তেমন কোনো শক্তির সঙ্গে জোটে যাওয়ার আগে তাদের অনেকবার ভাবতে হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। তবে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সমালোচনা ওঠায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল করা যেতে পারে।

নির্বাচনের আগে বিচারের একটি ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ গুম-খুনের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক দল ও সরকারের পক্ষ থেকে আসতে হবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী দলগুলোর সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছে, তাদেরও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা উচিত।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন।
উপস্থিত ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারওয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ।