শাবি শিক্ষার্থীদের হল ‘না ছাড়ার’ ঘোষণা
টানা চতুর্থদিনের মতো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টরিয়াল কমিটি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে উত্তাল শাবি। তারা ক্যাম্পাস না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার পর সকালে কিছু কিছু শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে দেখা গেছে। তারা মূলত আতঙ্ক থেকে হল ছেড়েছেন।
একই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তারা।
এদিকে, সকাল থেকেই পুরো ক্যাম্পাসে স্লোগান দিতে শোনা যায় শিক্ষার্থীদের। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।
হলগুলো এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এর পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে।
রবিবার দিনভর আন্দোলনে উত্তাল ছিল শাবি। এর মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। তাকে উদ্ধারে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। তাদের রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্ডে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন।
পুলিশের সহায়তায় মুক্ত হয়ে শাবি উপাচার্য বসেন জরুরি সিন্ডিকেট সভায়।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর সোমবার সকাল থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয় শাবিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই আন্দোলনে শাবি এখন উত্তাল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একযোগে শাবির বঙ্গবন্ধু হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হল, প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী (দ্বিতীয় ছাত্রী হল) হলে তালা লাগিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহপরান হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। শাবিপ্রবি প্রশাসনের কাউকেই হলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন হল থেকে কিছু শিক্ষার্থী বেরিয়ে গেছেন। নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তারা বেরিয়ে যান।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পরিস্থিতি যেভাবে ঘোলা হয়ে ওঠেছে, পুলিশ ও ছাত্রলীগ যেভাবে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে, তাতে ভয় ও আতঙ্ক থেকে তারা হল ছাড়ছেন।
এদিকে, শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদারকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘রবিবারের ঘটনা খতিয়ে দেখতে এই কমিটি করা হয়েছে। দ্রুত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন