শিকলে বাঁধা সাইফুলের জীবন!
আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট : সাইফুল ইসলাম। বয়স ১০ বছরের পথে। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলামকে দুই বছর ধরে পায়ে শিকল পড়িয়ে ঘরের মধ্যে বেধেঁ রেখেছে তার পরিবার। যাতে সাইফুল ইসলাম হারিয়ে না যায়। পায়ে শিকল থাকার কারণে দুই পা লাফিয়ে লাফিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয় সাইফুল ইসলামকে। চোখে সামনে প্রতি নিয়ত ছেলে এমন কষ্ট দেখেও অনেকটা বাধ্য হয়ে সবে মেনে নিচ্ছে সাইফুল ইসলামের পিতা-মাতা। এমন অমানবিক দৃশ্য দেখা যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারাপাড়া গ্রামে। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম ওই এলাকার আশরাফুল ইসলাম ও ছালেহা বেগম দম্পতির ছেলে।
মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলামের মা ছালেহা বেগম বলেন, জন্মের ২ বছর পর খেলতে গিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায় সাইফুল ইসলাম। ওই সময় তার মাথায় সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হলেও সুস্থ্য হয়ে উঠেনি সাইফুল ইসলাম। চিকিৎসা করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যায় আশরাফুল ইসলাম ও ছালেহা বেগম দম্পতি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সাইফুল ইসলামের চিকিৎসা। সাইফুল ইসলাম একটি মুহুর্ত্ব বাড়িতে না থেকে ছুটাছটি করে চলে। অনেক খোজাঁখুজির পর তাকে পাওয়া যায়। ফলে বাধ্য হয়ে তার দুই পায়ে শিকল বেঁধে ঘরের ভিতরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া তাকে বাইরে বের করা হয় না।
সাইফুল ইসলামের চাচা জিয়া ইসলাম বলেন, যতই অসুস্থ্য বা পাগল হোক, ছেলে তো আমাদের, তার প্রতি মায়া আছে। তাকে না দেখলে তার বাবা-মা ও আমাদের রাতে ঘুম আসে না। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম যাতে বেশী দূরে যেতে না পারে। বেশী দূর গেলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকেই। সেই কারণেই তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁেধ রাখা হয়েছে। যদি তাকে শিকল দিয়ে বাঁধা আমাদের অপরাধ হয়। তাহলে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতায় মায়া কেন দিয়েছে আল্লাহ, তা আমাদের প্রশ্ন। এর আগে সাইফুল ইসলাম একাধিক বার হারিয়ে গিয়ে ছিলো। কয়েক দিন পর মাইকিং করে তার খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই তার পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখা হয়েছে।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, সাইফুল ইসলাম তার নিজের নাম, বাবা-মায়ের নামসহ অনেক কিছুই বলতে পারে। শিশুটির সঠিক চিকিৎসা করানো হলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বছর প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য তার নাম তালিকায় পাঠানো হয়েছে। সাইফুলের বাবা আশরাফুল ইসলামও নিজেও একজন প্রতিবন্ধী।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কাশেম আলী বলেন, একটি শিশুর পায়ে সব সময় শেকল পড়িয়ে রাখা খুবই অমানবিক কাজ। তবে যতটুকু পারা যায় তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে।
আদিতমারী উপজেলার ইউএনও আসাদুজ্জামান জানান, শিশুকে শেকল পড়িয়ে রাখা খুবই দুঃখ জনক। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চিকিৎসা করানো উচিত। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে চেষ্টা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন