শিবির সন্দেহে নিজেদের কর্মীকে রড দিয়ে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ
শিবির সন্দেহে নিজেদের এক কর্মীকে রড দিয়ে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ৷ রবিবার(১৩ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে৷ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইউসুফ উদ্দীন খানের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটায়৷
জানা যায়, ২০১৬ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্টের ভিত্তিতে ওই কর্মীকে ‘শিবির’ আখ্যা দেওয়া হয়৷ হামলার শিকার ওই কর্মীর নাম মনিরুল ইসলাম৷ তিনি ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী৷ তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শারদা ইউনিয়নে৷ চিকিৎসার জন্য মধ্যরাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়৷ সেসময় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে গেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে দেখা যায়৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থান৷ নির্দোষ কাউকে হেনস্তা করা হচ্ছে না৷ সেরকম কিছু ঘটে থাকলে উপযুক্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মনিরুল ইসলামকে হলে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ রাত দেড়টার পর জিয়াউর রহমান হলের ২২৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে মনিরুল ইসলামকে যন্ত্রণাকাতর ও বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ তবে মনিরুল ও তার বন্ধুরা কিছু বলতে রাজি হয়নি৷
হল ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ফেসবুকে মনিরুল ইসলামের শেয়ার করা একটি পোস্টের ভিত্তিতে তাকে শিবিরকর্মী বলে শনাক্ত করা হয়৷ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলের ২২৭ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে তাকে রড দিয়ে পেটায় বিভিন্ন বিভাগে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত জিয়া হল ছাত্রলীগের একদল কর্মী, যাদের সবাই পদধারী৷ তারা হলেন-হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আলী হোসেন,উপ-মানবসম্পদ সম্পাদক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র আলী রেজা খান,উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক ও উর্দু বিভাগের ছাত্র ইমরুল কায়সার,উপ-ধর্ম সম্পাদক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান,উপ-ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক সুজন মাহমুদ বাবর,কার্যকরী সদস্য নিজারুল ইসলাম ও সহ-সম্পাদক মাহমুদুল হাসান জেপু৷
এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইউসুফ উদ্দীন খান বলেন,’গত বছর মনিরুল ইসলামের শেয়ার করা জামায়াত-শিবির সমর্থক একটি ফেসবুক পোস্ট এবং জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পেজে লাইক দেখে তাকে শিবিরকর্মী হিসেবে সন্দেহ করা হয়৷ ২য় বর্ষের ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে প্রহার করেছে৷প্রহারের বিষয়টা আমি জানতাম না৷’
শিবির সন্দেহে প্রহার করে আবার হলে ফিরিয়ে আনা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি৷
মনিরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি শারদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান মধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছে মনির ও তার পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনির আমার পরিচিত৷তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়৷ সে ভালো পড়াশোনা করতো৷ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সে কখনোই জড়িত ছিল না৷ তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত৷’
মনিরুল ইসলামের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার পড়াশোনার খরচ চালান বলে জানা গেছে৷
প্রসঙ্গত,গত ৭ আগস্ট সিলেটের জালালাবাদে দুর্বৃত্তের হামলায় ছাত্রলীগের দুই কর্মী মারাত্মক আহত হন।এদের মধ্যে কুপিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পর মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী সিলেট সদর উপজেলার পীরপুর টুকেরবাজারের শাহীন আহমেদের হাত কেটে ফেলতে হয়।এ ঘটনার জন্য শিবিরকে দায়ী করেছে ছাত্রলীগ।আর ৯ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশে শিবিরের বিরুদ্ধে ‘অ্যাটাকে’ যেতে নির্দেশ দেন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।তাদের নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র গিয়াস উদ্দিনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগকর্মীরা।এর আগে সিলেটের ঘটনার পর পর লক্ষ্মীপুরে দুই শিবির কর্মী এবং ৮ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন