শিল্পের নিরাপত্তা চান ব্যবসায়ীরা

দেশে ব্যবসায়ের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, দুর্বৃত্তরা কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আসছে। এ রকম অবস্থায় সারা দেশে পুলিশ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জীবন ও সম্পদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি দল বা বিরোধী দল বলে কিছু নেই। যারাই সরকার পরিচালনায় থাকবে, তাদের সহযোগিতা করবে বেসরকারি খাত। মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ছাত্রসমাজ স্মরণীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না এবং তা চলতে পারে না।
‘কারখানা চালাতে পারছি না’

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘নতুন যে অন্তর্বর্তী সরকার আসবে, সেটি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা উৎপাদন ও রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তাদের ঘণ্টা-মিনিট হিসাব করে কাজ করতে হয়। কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কারখানা চালাতে পারছি না।’

এ কে আজাদ আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চারটি বিষয় বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। এগুলো হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, ভারখানা চালুর ব্যবস্থা করা, মানুষের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং থানা ও পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে তোলা। এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং কারখানায় নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

আইসিসিবির বোর্ড সদস্য তপন চৌধুরী বলেন, শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এভাবে হামলা চালিয়ে দেশের ক্ষতি করছে দুষ্কৃতকারীরা।

রহিম টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ মতিন চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার বিদেশি তিনটি কোম্পানি জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ থেকে ৩০ শতাংশ কার্যাদেশ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ডিবিএল গ্রুপের এমডি এম এ জব্বার বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেলে, উৎপাদন ঠিক থাকলে ও পণ্য বন্দরে পৌঁছাতে পারলে খুব কাছাকাছি সময়ে বর্তমান ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।

‘ইউনূসকে স্বাগত জানাই’

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল- আলম চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। ফলে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা পাওয়া সহজ হবে বলে আশা করছি।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী নেতাও এমন বক্তব্য দেন।

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শুধু ব্যবসার জন্য নয়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্যও আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। সিমিন রহমান বলেন, দেশ বর্তমানে একটি কঠিন ও পরিবর্তনশীল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় নানা ধরনের প্রচার চালিয়ে বাইরে দেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা প্রয়োজন।
আইসিসিবি সহসভাপতি নাসের এজাজ বিজয়ও দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দেন।