শিশু আদালতের ক্ষমতা পাচ্ছে নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে শিশু আদালতের ক্ষমতা দিয়ে ‘শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘শিশু আইন ২০১৩ সালের, খুব বেশি পুরনো না। এখানে একটু সমস্যা হচ্ছিল, শিশু আদালত গঠন নিয়ে ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। এ ক্রাইসিস দূর করার জন্য সংশোধনীটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে আদালতের এখতিয়ার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যাতে কোনো অবস্থাতেই মামলা থেমে না থাকে বা কেউ যেন বিলম্বিত বিচার ব্যবস্থার শিকার না হয়।’
তিনি বলেন, ‘আইনের ১৬ ধারায় ১৬(ক) নাম দিয়ে একটি সংশোধন আনা হয়েছে। সেটা হচ্ছে- ম্যাজিস্ট্রেট অর্থ ফৌজদারি কার্যবিধির ধারায় ৬ এর উপধারা ৩-এ উল্লেখিত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট যার অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।’
‘শিশু আদালত বলতে বোঝাতে আইনের সঙ্গে সংঘাত জড়িত শিশুর যে কোনো অপরাধ বিচার করার জন্য প্রত্যেক জেলা শহরে শিশু আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকবে। এ আদালত আলাদাভাবে নেই। এ আইন হওয়ার পর থাকবে।’
সংশোধিত আইন অনুযায়ী ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীন গঠিত প্রত্যেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে শিশু আদালতের ক্ষমতা দেয়া হল। তারা এ কাজটা করতে পারবেন।’
‘তবে কোনো জেলায় এমন আদালত না থাকলে ওই জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগে আইনে শুধু শিশু আদালত ছিল, বিস্তারিত ছিল না। এতে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল।’
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (সংশোধন) আইন অনুমোদন
‘বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটি ২০০৪ সালের আইন। কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বিশেষে সবাই কর্মচারী নামে অবহিত হবেন। এটা একটা সংশোধনী।’
‘এখানে (খসড়া আইনে) ক্ষমতা অর্পণের একটি বিষয় এসেছে। চাঁদার শিডিউলে চাঁদা দেয়া হয় সেটা যাতে ওনারা (সরকারি কর্মচারী) বোর্ডের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময়ে সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারেন সেই ক্ষমতা চাওয়া হয়েছে। এটাই মূলত মূল প্রস্তাব।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা যদি কার্যকর হয়, এখন যে রেইট আছে- কল্যাণ তহবিলের মাসিক চাঁদা এ পর্যন্ত দেয়া হত মূল বেতনের এক শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এখন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যৌথ বীমার মাসিক সর্বোচ্চ প্রিমিয়াম ৪০ টাকা সেটা ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
শফিউল আলম জানান, প্রস্তাবিত আইনে মাসিক কল্যাণ ভাতা এক হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা, সাধারণ চিকিৎসা অনুদান সর্বোচ্চ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা, দাফনের জন্য ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, যৌথ বীমার এককালীন অনুদান এক লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এগুলোর বিষয়ে যদি আইনি বিধান থাকে যে বোর্ড করতে পারবে, তবে ওনাদের বার বার সংসদে যেতে হবে না। এটা জন্যই এ প্রস্তাবটা আনা হয়েছে।’
বস্ত্র আইন চূড়ান্ত অনুমোদন
বৈঠকে ‘বস্ত্র আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গত বছর বস্ত্র খাতের রফতানি আয় মোট রফতানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছিল। তাই বস্ত্রখাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ‘বস্ত্র আইন, ২০১৮’ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘এখানে একটি অধিদফতর থাকবে। বস্ত্রের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে খসড়া আইনে। সরকার প্রয়োজনে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও শর্তে কোনো বস্ত্র শিল্পকে প্রণোদনা দিতে পারবে। এ প্রভিশন রাখা হয়েছে আইনে।’
খসড়া আইনে বস্ত্র শিল্পের নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘বস্ত্র অধিদফতরের মহাপরিচালক নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবেন। নিবন্ধন নবায়নেরও বিধান রাখা হয়েছে আইনে।’
সরকার আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগার স্থাপন করতে পারবে বলেও খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন অনুমোদন
মন্ত্রিসভা ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা ১৯৭৪ সালের আইন। এরপর কয়েকটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে এটি সংশোধন করা হয়। কিছু সংশোধনী সামরিক শাসনামলে হয়েছে, এজন্য এটিকে বাংলায় নতুন করে আনা হয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন