শুভ জন্মদিন কবি নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী, যিনি বাংলা সাহিত্যে নির্মলেন্দু গুণ নামেই সবার কাছে পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের এই অন্যতম প্রধান কবির ৭৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৭৭ সালে, দেশে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ গণতন্ত্র, তখন বাংলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করে কবিখ্যাতি পান কবি নির্মলেন্দু গুণ।

তার সেই বিখ্যাত কবিতাটি ছিল- ‘সমবেত সকলের মতো আমিও পলাশ ফুল খুব ভালোবাসি/ সমকাল পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে/ আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।/ আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।/… আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি/ আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।’

নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ সালের আজকের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন। তার মা বীণাপাণি, বাবা সুখেন্দ্র প্রকাশ গুণ। ১৯৬২ সালে বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএসসিও পাস করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হলেও ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ায় তিনি গ্রামে চলে যান। পরে ফিরে এসে দেখেন, তার নাম তালিকা থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। ১৯৬৯ সালে তিনি প্রাইভেটে বিএ পাস করলেও সার্টিফিকেট তোলেননি।

নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শ্রেণিসংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, জীবন-প্রকৃতি আর স্বপ্ন দেখার অলীক ঘোর তার কবিতার প্রাণশক্তি। কবিতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গল্প, আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ও ভ্রমণসাহিত্যও রচনা করেছেন নির্মলেন্দু গুণ। এ কবির প্রথম কবিতার বই ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, যা লিখেই কাব্যজগতে নিজের আসন স্থায়ী করে নেন তিনি।

পারিবারিক জীবনে এক কন্যাসন্তানের জনক। নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘কাশবন’। যার মধ্যে রয়েছে সংগীত ও চিত্রাঙ্কন বিদ্যালয়, সংগ্রহশালা, গ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মুক্তমঞ্চ। তিনি ‘কাশবন বিদ্যানিকেতন’ নামে একটি বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

কবি নির্মলেন্দু গুণ ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০১১ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন।