শূন্যতা আর সব হারানোর বছর ২০২০

করোনার বিরুদ্ধে একদিকে টিকা প্রয়োগে আশার আলো, অন্যদিকে ভাইরাসের নতুন ধরন মানব সভ্যতাকে চোখ রাঙাচ্ছে। এমনই দোলাচলে শেষ হচ্ছে ২০২০ সাল। বিষময় বিশে কেমন ছিলেন সাধারণ মানুষ?

অন্তর্দগ্ধ এক স্তব্ধতা। ঘড়ির কাঁটার শব্দ ছাড়া যেন কিছুই নেই। সময়কে কুরে কুরে খাচ্ছে, অদৃশ্য এক শত্রু। এখন নিজের ছায়ার সাথেই কেবল কথা বলা যায়।

শক্ত মুঠিতে যিনি ধরে রেখেছেন জীবনের হাল। তিনি রংপুরের মাজেদ। জীবনের কত রঙ্গই তো দেখা হলো তার, এবার দেখেছেন ২০২০। তিনি জানান, ১৯৭১ এর পর সবচেয়ে খারাপ সময় কাটল ২০২০ সালে। বলেন, ‘বছর জুড়ে রাস্তায় তো আসছিলাম, কিন্তু কোন কাজ ছিল না। যা আয় করেছি, তা দিয়েই কোন রকমভাবে খেয়ে পড়ে চলেছি।

এখনো সকলের শম্বুক-শঙ্কিত হাঁটাচলা। তবে জীবনের ফেরে কঠোর-কঠিন ইস্পাতকে যারা বশে আনেন, ২০২০ তাদের জন্য কতটা বিষাদের হলো? তাদের হাঁড়িতে ভাতের খবর রেখেছে কি কেউ। এক কামার জানান, আয় রোজগার নেই। সব দিকে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

এবারের গল্পটা, নদীর পাড়ের মহসীন মিয়ার। ছোট এই নৌকা, জীবনের বড় অবলম্বন। এপার-অপার করতে করতেই দিন গেল। সুদিন আর আসলো না। তিনি জানান, লোকজন না থাকায় ঠিক মতো নৌকা চালাতে পারিনি। লোকজনও ঠিক মতো পারাপার হয়নি। তাই আয় রোজগার ও হয়নি।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাতের মজনু। কেমন ছিল তার ২০২০? ক্লান্ত, চূর্ণ-বিচূর্ণ, ভগ্ন হৃদয়ে চায়ের কাপে এখনো খুঁজে ফেরেন নিজের ভবিষ্যৎ। তিনি জানান, সব মিলিয়ে ২০২০ সাল খুবই খারাপ গেছে। করোনার টিকা যদি পাই, তাহলে তো আশা করি, এই খারাপ সময় ভবিষ্যতে কাটিয়ে উঠতে পারবো।

দম বন্ধ করা শূন্যতার বছর ২০২০। এ বছর প্রমাণ হলো মৃত্যুকাতর ভঙ্গুর মৃৎপাত্র সবাই। তাই তো জীবনের ফাটল ধরার মুহূর্তে, তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আত্মানুসন্ধানের নতুন এক রক্তদীপময় আয়নার সামনে করোটি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২০২০ সাল যেন সব হারানো আর শিক্ষা নেয়ার বছর।